আত্মহত্যাকে না বলুন- প্রীতম আহমেদ

সব দেশেই মিডিয়াতে কোন শিল্পী হিংসা ও নোংরা আক্রমণের শিকার হলে আত্মহত্যার আগে পর্যন্ত তার পাশে কেউ থাকে না। অথবা কেউ নীরবে দূরে চলে যায়।
২০০৬ সালে যখন আমাকে সাউন্ডটেক থেকে ব্যান করা হয় তখনও ঐ কোম্পানি থেকেই বাজারে পর পর চলো পালাই ও বালিকা এ্যালবাম তুমুল হিট। আর তাই পরের এ্যালবাম রিলিজ হবার পর পরই ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছিলেন সারাজীবন সুযোগ সন্ধানী অজগর। সাউন্ডটেক এর প্রযোজনায় চ্যানেল আই এর সারেগামা নামের যে অনুষ্ঠান আমার নিজে হাতে তৈরি। যে অনুষ্ঠানে আমি অসংখ্য শিল্পীর গান চালিয়েছি বছর জুড়ে সেই অনুষ্ঠানে ২০০৬ সালের পর কোনদিন আর আমার গান বাজানো হয়নি। এ টি এন বাংলায় সাউন্ডটেকের যে অনুষ্ঠান চলতো সেখানে আমার গান বাজানো বন্ধ হয়েছিল। ২০০৬ সেপ্টেম্বরে আমার সন্তান জন্ম নেয় হাসপাতালে। ঠিক সেই সময়েও প্রকাশিত এ্যালবাম বাবদ কোম্পানির দেয়া চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হয়েছিলো। বাকিটা দেয়া হয়েছিলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে। ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এতো বড় বড় কোম্পানির বিপরীতে আমার নতুন প্রতিষ্ঠান থেকে গান রিলিজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করতে হয়েছে। যারা বলেন বালিকা গান এর পর আমি কেন হারিয়ে গিয়েছিলাম তাদের উত্তরটা আজ দিলাম।
যে আমি মুহূর্তের মধ্যে কথা সুর তৈরি করে গান বানিয়ে ফেলতে পারি। যে আমার প্রতি সপ্তায় ২/৩ টি গানের রেকর্ডিং শুটিং সেই আমি ২/৩ বছর সম্পূর্ণ বেকার। জমানো টাকায় চলতে চলতে খরচ কমাতে প্রথমে বাদ দিতে হয়েছিলো ড্রায়ভার, তারপর এক সময় গাড়িই বিক্রি করে দিয়েছিলাম।
আমরা যারা শিল্পের কারনে সমাজে পরিচিত হই তাদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে ক্ষুধায় মুখ শুকিয়ে গেলেও জনতার সামনে মুখে হাসি রাখতে হয়। নাহলে তারা অহংকারী ভাবতে শুরু করে। আর কাছের মানুষ ভেবে যাদের বুকে জড়িয়ে ধরি তাদের হাতে কেবলই শাণিত চাকু। তাই আপন বলে শুধু ঐ এক সৃস্টিকর্তা।
সাউন্ডটেক এর কর্ণধার বাবুল ভাই বিষয়টা নিয়ে খুব বিব্রত ছিলেন। আমাকে সান্তনা দিতে বলেছিলেন, প্রীতম সাহেব, আপনি ভদ্রলোক মানুষ এই কারনে আত্মসম্মানটা হয়তো বেশি। কিন্তু এই সমাজে টিকতে হইলে আপনাকে সাপ ও বেজি দুইজনের সাথেই বন্ধুত্ব করে চলতে হবে। তবুও আমি আপোষ করতে পারিনি।
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাতে যে আঘাত আমি পেয়েছি তাতে যে কোন মানুষই নিঃশেষ হবার কথা। গান দুরের কথা, প্রাণ বাঁচানোই ঝুকি ছিলো। তাই আমার জীবনটাও কম ঝড়ের মধ্যে দিয়ে যায়নি। অশিল্পি হায়নাদের চামচামি না করতে পারার কারনে ব্যাক্তিগত জীবনে ব্যর্থতার গ্লানি দিয়েছে পরিবারের আপন মানুষ, তাই হারানোর তালিকাও দীর্ঘ। সে সময় কোনমতে টিকে ছিলাম তাই আজও আপনাদের সামনে লিখতে পারছি।
আমার জীবন থেকে অনেক গুলো সুন্দর বছর নষ্ট হয়েছে ঠিকই কিন্তু আজো মাথা উঁচু করেই আত্মসম্মান নিয়ে দাড়িয়ে আছি। একটা শিক্ষা নিয়েছি তা হলো নিজের শিল্প অশিল্পীর কন্ঠে তুলে দিতে হয়না। আর সেই থেকে অডিও ইন্ডাস্ট্রি বেইজড ক্যারিয়ারও করতে চাইনি। যদিও ওই বাজারেও এক সময় ধশ নেমে গেছে।
তাই বলি, সব কিছুরই শেষ আছে। যদি কখনো এমন মানসিক ও পেশাগত নির্যাতনের শিকার হন ভেঙ্গে না পরে শক্ত থাকুন। চেষ্টা করুন নিজের ভেতরের সুন্দর মনটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। চেনা পরিচিত স্বার্থপর সমাজের বাইরে নতুন একটা সমাজ তৈরি করে বাঁচুন। কারন আপনি মরে গেলে হেরে যাবেন আর ওরা জিতে যাবে । যারা আপনাকে আঘাত করে, স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিয়ে নিজেকে বড় করার জন্য নোংরামি করেছে তাদের পরিণতি দেখার জন্য হলেও বেঁচে থাকুন।
আত্মহত্যাকে না বলুন।