প্রাণের ৭১

সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

সুন্দরবনে কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্টটিকে হুমকির মুখে ফেলে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ, এবার এমন অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কারণে যে দূষণ হবে, তাতে জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করা প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক জানান, গত মাসে ভারত বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান, যা বঙ্গোপসাগরে গত ২০ বছরে আঘাত হানা ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এর ফলে বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, ছাদ উড়ে গেছে, খেত-খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।

তবু বাংলাদেশ দক্ষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, আগাম সতর্ক বার্তা দিয়ে, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে,  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছে।   মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।

মীনাক্ষী আরও বলেন, উপকূলীয় জনগণের প্রাণ বাঁচাতে আরও সহায়তা করেছে ঝড়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ঢাল- সুন্দরবন। সংরক্ষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্টটি তার শেকড় দিয়ে ঝড়ের সময় তৈরি হওয়া তীব্র ঢেউ থেকে স্থলভূমিকে রক্ষা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আম্পানের মতো চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। অথচ প্রয়োজনের সময়েই ঝুঁকির মুখে পড়েছে সুন্দরবন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক জানান, বাতাস থেকে কার্বন শুষে নেয়ার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ধীর করে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, অন্যদিকে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, সুরক্ষা দেয়া ও তা পূরণ করার অংশ হিসেবে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, বর্তমান বিজ্ঞানের আলোকে জলবায়ু নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

বিবৃতিতে সংস্থাটি আরও বলে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ঠেকানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা বৈশ্বিক নেতৃত্বের।

ম্যানগ্রোভ বাঁচাতেও দেশটির উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আরও বাড়বে, প্রাকৃতিক সুরক্ষা হারিয়ে আরও শক্তিশালী ঝড়ের মুখে পড়তে হবে দেশটিকে।

 

জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটি বড় বাস্তবতা, বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জন্য একটি তাৎক্ষণিক ঝুঁকি।   সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে দেশের ২০ ভাগ স্থলভূমি তলিয়ে যাবে, উদ্বাস্তু হবে লাখো মানুষ।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদীরা বারবারই বলে আসছেন,  বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।   তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত কিংবা অন্য কোন স্থান বেছে নেয়ার দাবি বরাবরই উপেক্ষা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

এদিকে, সুন্দরবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ ন্যাচারের সুপারিশ খারিজ করে দিয়েছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি, যার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে চীন। এমন কি, এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তপত্রে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য আরও দুটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উল্লেখ না করার প্রস্তাব পাশ করে চীন, বসনিয়া এবং কিউবা।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*