ভারতের খয়রাতের(ঋন) পরিমান তাদের রিজার্ভের থেকেও বেশি
সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নেয়া চীন থেকে ঋন কে উল্লেখ করা হয়েছে খয়রাতি হিসাব। ভারতের সংবাদ মাধ্যম সম্প্রতি শিরনাম করেছে “ভারতকে চাপে ফেলতে বাংলাদেশকে ‘খয়রাতি’ চিনের!”
আরেক পত্রিকা আনন্দবাজার শিরনামে এই শব্দচয়ন না করলেও ভেতরে লিখেছে-
“বাণিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা নতুন নয় চিনের। “
উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আজ আমরা ভারতের খয়রাতির চিত্র তুলে ধরব। এই আলোচনায় অভ্যন্তরীণ ঋনের হিসাব না করে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ঋনের তথ্য নিয়ে আমরা ভারতের খয়রাতির চিত্র তুলে ধরব।
ভারতের বিদেশ থেকে নেয়া মোট খয়রাতির (বৈদেশিক ঋনের) পরিমান ৩১ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত $৫৬৩.৯ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমান খয়রাতি তাদের জিডিপির প্রায় ২০% এর বেশি।
এই খয়রাতি গুলি ভারত করেছে বিভিন্ন মাল্টিল্যাটারাল, বাইল্যাটারাল উৎস থেকে যার মধ্যে রয়েছে Asian Development Bank (ADB), the International Development Association (IDA), the International Bank for Reconstruction and Development (IBRD), the International Fund for Agricultural Development (IFAD) এবং অন্যান্য। মাল্টিল্যাটারাল উৎস থেকে ভারতের নেয়া খয়রাতির পরিমান প্রায় $৬০.২২ বিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে বাইল্যাটারাল উৎসের ভেতর ভারত খয়রাতি করেছে জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি চীন হতে। এসব উৎস থেকে পাওয়া ভারতের মোট খয়রাতি এখন $২৬.৩৩ বিলিয়ন ডলার।
International Monetary Fund report অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক ডেট বা ঋন ২০২১ অর্থবছরে ৪০.১২% হতে পারে। “Fiscal Monitor – April 2020” রিপোর্টে IMF শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এবং নেপালের গ্রস ঋন প্রকাশ করেছে। আর IMF এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের মোট ঋন এখন তাদের জিডিপির ৭৩.৮০%। এই হিসাব অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋন মিলিয়ে।
এত ঋন (খয়রাতির) বিপরীতে ভারতের রিজার্ভ আছে ১২ জুন, ২০২০ পর্যন্ত $৫০৭.৬৪৪ বিলিয়ন ডলার যেখানে বিদেশ থেকে নেয়া তাদের ঋনের পরিমান $৫৬৩.৯ বিলিয়ন। এখানে উল্লেখ্য যে ভারতের এই রিজার্ভ তাদের স্বর্ণ রিজার্ভ সহ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে তাদের $৫০৭.৬৪৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের ভেতর Foreign Exchange Assets (FCA) এর পরিমান $৪৬৮.৭৩৭ বিলিয়ন, স্বর্ণের রিজার্ভের বাজার মূল্য $৩৩.১৭৩ বিলিয়ন, SDRs (Special Drawing Rights with the IMF) $১.৪৫৪ বিলিয়ন এবং বাকি $৪.২৮০ বিলিয়ন Reserve Bank of India’s (RBI) এর কাছে।
বাংলাদেশের মোট ঋনের পরিমান ভারতের থেকে অনেক কম। শতাংশের হিসাবে অর্ধেক। প্রশ্ন থেকে যায় বাংলাদেশ ঋন নিলে ভারতের মিডিয়ায় খয়রাতি হলে ভারতের ঋন কেন খয়রাতি হবেনা?
বি:দ্র: শুধুমাত্র ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের নেয়া ঋন সম্পর্কে খারাপ শব্দের ব্যাবহারের প্রতিবাদ স্বরুপ এভাবে শব্দচয়ন করা হয়েছে। খয়রাতির বিকল্প ঋন হিসাবে পড়ুন। আর ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারের কিছু অংশ জুড়ে দেয়া হল।