প্রাণের ৭১

বেশির ভাগ মানুষের জন্যই হয়তো সামাজিক দূরত্ব এক ধরনের বিলাসিতা

চীন থেকে বিশেষজ্ঞদের একটা দল আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার জন্য এসেছিল। খবরে দেখলাম তারা ফিরে যাওয়ার সময় এ দেশের মানুষের সচেতনতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে গেছে!

তবে এটা জানার জন্য অবশ্য চীনা বিশেষজ্ঞের দরকার নেই, আমরা চোখ খুলে তাকালে নিজেরাই দেখতে পাই। এজন্য অবশ্য সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই- এ দেশটি তো আর চীন হয়ে যায়নি যে, মানুষজন ঘরে বসে থাকলেও তাদের জন্য দুই বেলা খাবার চলে আসবে।

বেশির ভাগ মানুষের জন্যই হয়তো সামাজিক দূরত্ব এক ধরনের বিলাসিতা; এ বাস্তবতাটুকু মেনে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। ভাগ্যিস পরামর্শ দেয়ার জন্য চীনা বিশেষজ্ঞরা আমেরিকা যায়নি, তাহলে তারা নিশ্চয়ই হতাশায় মাথা চাপড়াত! করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি পদ্ধতিতে কাজ করতে দেখা গেছে। একটি হচ্ছে মুখে মাস্ক পরা, আরেকটি হচ্ছে একজন থেকে আরেকজন দূরে দূরে থাকা এবং শেষটি হচ্ছে আবদ্ধ ঘরে একসঙ্গে অনেক মানুষ লম্বা সময় ধরে না থাকা।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করার জন্য একসঙ্গে এ তিনটি নিয়ম ভঙ্গ করে গণজমায়েত করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জেনেশুনে যে মানুষগুলো এ বিপদের মুখোমুখি হতে এসেছে তাদের সবাইকে একটা কাগজে সাইন করতে হয়েছে যে, এ গণজমায়েতে হাজির হওয়ার কারণে তাদের যদি কোনো রোগবালাই হয়, তার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়ী নন। রসিকতা আর কাকে বলে!

 

তবে বিচিত্র কাজকর্মের ব্যাপারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে টেক্কা দেয়া মুশকিল। ঠিক কী কারণ জানি না, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আমাদের দেশকে হেয় করে খবর প্রকাশ করতে খুব পছন্দ করে।

 

আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাতারাতি চব্বিশ লাখ মানুষকে তাদের গবাদিপশুসহ নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার মতো বড় ঘটনা নিয়ে কাউকে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি; কিন্তু একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটু সর্দি-কাশি হলেই সেটি পৃথিবীর সব সংবাদমাধ্যমে চলে আসবে!

 

কাজেই মোটামুটি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়, ওলামা লীগের করোনা নিয়ে মানববন্ধনের খবরটি সম্ভবত অনেক গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে!

তবে এ মানববন্ধনটি অন্য যে কোনো মানববন্ধন থেকে বেশি চমকপ্রদ। কারণ সেখানে ঘোষণা করা হয়েছে, এটি (করোনা সংক্রমণ) মোটেও মহামারী নয়; মহামারী হতে হলে প্রতি ঘণ্টায় ২০ হাজার করে মানুষ মারা যেতে হবে, এক্ষুনি সব ধরনের লকডাউন তুলে সবকিছু খুলে দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি (এ সংগঠনটি সম্পর্কে আমি বেশি জানি না, তাদের ব্যানারে জয় বাংলা এবং জয় বঙ্গবন্ধু লেখা।

 

একবার দেশের বাইরে থেকে দেশের খবর পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করেছিলাম ওলামা লীগ আমার ফাঁসি চেয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করছে!

 

আমি কী অপরাধ করেছিলাম সেটি এখনও জানি না)। দেশে মহামারীর সময় এ ধরনের আচরণের পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন খবর পাইনি।

 

তবে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য কাউকে কাউকে ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এত তুচ্ছ কারণে একজনকে গ্রেফতার করে ফেলা যায়, সেটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। আমি যখন প্রথমবার ডিজিটাল আইনটি দেখেছিলাম তখনই আমার মনে হয়েছিল এটি খুবই বিপজ্জনক একটি আইন, কারণ এটি ব্যবহার করে যখন ইচ্ছা যাকে খুশি তাকে গ্রেফতার করে ফেলা যাবে।

 

ঠিক কতটুকু বলা হলে একটি বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ এবং কতটুকু বলা হলে সেটি গ্রহণযোগ্য সেগুলো কোথাও লেখা নেই; তাই একজনকে গ্রেফতার করা হবে কী হবে না, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও আছেন।

 

যৌন হয়রানি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পার পেয়ে যান; কিন্তু কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য গ্রেফতার হয়ে হাজতে থাকতে হয়, আমি সেই হিসাবটা মেলাতে পারি না। যারা গ্রেফতার হয়েছে তার ভেতরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার একজন সাবেক ছাত্রও আছে।

 

আমি যতদূর জানি, আমার এ সাবেক ছাত্রটি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিল, হঠাৎ করে সে কী কারণে গ্রেফতার হয়েছে আমি জানি না। এগুলো জানতে হলে সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়; কিন্তু আমি নীতিগতভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকি, তাই সবকিছু জানতে পারি না। শুধু অনুভব করতে পারি, কোথায় জানি অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।

 

তবে এটি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের দেশের মানুষের ভেতরে একটি মৌলিক পরিবর্তন করে ফেলেছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষজন অশালীন কিংবা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ্যে উচ্চারণ করত না। কীভাবে কীভাবে জানি সেই অবস্থাটা পাল্টে গেছে। এখন একজন অবলীলায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অশ্রাব্য অশালীন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা সেটাতে ‘লাইক’ এবং ‘শেয়ার’ নামে অতি বিচিত্র আরও দুটো প্রক্রিয়া ঘটিয়ে তাকে উৎসাহ দেয়। মানুষের চরিত্রের সবচেয়ে দুর্বল অংশটুকুতে সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে পাল্টে দেয়া হয়, সে আর স্বাভাবিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। একসময় মানুষ লেখালেখি করত, এখন ‘স্ট্যাটাস’ দেয়। যে কথাটি বললে মানুষ বেশি ‘লাইক’ দেবে, ঘুরে-ফিরে সেই কথাটিই বলে। শুধু যে নিয়ন্ত্রণহীন অশ্রাব্য-অশ্লীলতা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটছে তা নয়, সম্ভ্রান্ত খবরের কাগজের খবরের পেছনে ‘কমেন্ট’ দেয়ার বেলায়ও মানুষের কোনো বাছবিচার নেই। কোনো কোনো সংবাদপত্র দায়িত্বহীনের মতো পাঠকদের অমার্জিত কথা বলার সুযোগ করে দেয়। আমি সযত্নে সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। তারপরও হঠাৎ চোখ পড়ে গেলে শিউরে উঠি, গা ঘিন ঘিন করতে থাকে। আমাদের দেশের মানুষ কেমন করে এত অমার্জিত, এত অভব্য হয়ে গেল?

বিষয়টি জটিল। করোনার যন্ত্রণা শেষ হয়ে গেলে আমাদের একটা নতুন আন্দোলন শুরু করতে হবে যেখানে সবাইকে বোঝাতে হবে, অমার্জিত, অভব্য, অশালীন কথা বলে আরও কিছু অশালীন মানুষের বাহাবা পাওয়াটি আধুনিকতা নয়, সুন্দর করে মিষ্টি কথা বলা হচ্ছে সত্যিকারে আধুনিকতা।

 

২.

 

বেশ কিছুদিন আগে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম স্কুলের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নিয়ে। আমাদের দেশের পুরো লেখাপড়াটাই হয়ে গেছে পরীক্ষাকেন্দ্রিক; অথচ পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যেখানে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হয় ১৬ বছর বয়সে। আমাদের ছেলেমেয়েদের আমরা পরীক্ষার পর পরীক্ষা নিয়ে জর্জরিত করে রাখি; কিন্তু দিন শেষে আমরা যখন যাচাই করতে যাই, তারা কতটুকু শিখেছে, তখন দেখতে পাই মূল বিষয়গুলোই তারা ঠিকভাবে শেখেনি। সেই লেখায় আমি অনেকটা কৌতুকের সঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিলাম, পরীক্ষা নিয়ে লেখাপড়া করিয়ে যদি আমরা তাদের ঠিকভাবে শেখাতে না পেরে থাকি তাহলে পরীক্ষা ছাড়া লেখাপড়া করিয়ে দেখলে কেমন হয়?

 

খুব তো খারাপ কিছু হওয়ার কথা নয়, অন্ততপক্ষে ছেলেমেয়েদের জীবন তো একটুখানি আনন্দময় হবে! বলাই বাহুল্য, আমার বক্তব্য মোটেও বাস্তবমুখী ছিল না, কেউ সেটি সিরিয়াসলি নেবে আমি আশা করিনি। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না নেয়ার একটা প্রস্তাব বহুদিন থেকে আলোচনা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন করা গেছে কিনা আমি এখনও জানি না।

 

আমি মোটেই এভাবে চাইনি, তারপরও কোনো পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা বছর কাটিয়ে দেবে আমার সেই অবাস্তব প্রস্তাবটি হঠাৎ করে সত্যি সত্যি ঘটে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা (কিংবা আশঙ্কা) তৈরি হয়েছে।

 

করোনার কারণে দেশ এখনও আবদ্ধ, লকডাউন তুলে দেয়ার পর বেছে বেছে কিছু এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে আবার সেগুলো আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। অনেক কিছু খুলে গেছে; কিন্তু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ।

 

সত্যি সত্যি ৬ আগস্টের ভেতর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ফেলার মতো অবস্থা হলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে অবস্থা, ৬ আগস্ট সত্যি সত্যি আমরা সব স্কুল-কলেজ খুলে দিতে পারব কিনা কেউ সেটি এখনও জানে না। কাজেই এমনটি হতেও পারে যে, ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিতে নিতে আরও সময় লেগে যাবে, দেখা যাবে তখন পরীক্ষা নেয়ার মতো সময় হাতে নেই। তখন অন্য কোনোভাবে তাদের যাচাই করে উপরের ক্লাসে তুলে দেয়াটাই সম্ভবত একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে।

 

আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছি; কিন্তু শিক্ষকদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে। মাঝে মাঝেই তাদের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার খবর নেয়ার চেষ্টা করি। মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা অনলাইন লেখাপড়ায় খুব উৎসাহী নয়। তাদের নানা ধরনের যুক্তি আছে, কিছু দায়সারা কিছু সত্যি। বড় শহরে ইন্টারনেট সার্ভিস কাজ চলে যাওয়ার মতো হলেও মফস্বলে সেটি সেরকম নির্ভরযোগ্য নয়।

 

আমার একজন ছাত্রের (পরবর্তী সময়ে সহকর্মী) বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বলে সে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ২.৫ কিলোমিটারের ফাইবার টেনে নিয়ে গেছে! সবাই তার মতো করিৎকর্মা হবে সেটি আশা করা যায় না। কাজেই ছাত্রছাত্রীরা যদি সেটি নিয়ে অভিযোগ করে কিংবা খরচের অজুহাত দেয় সেটি উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

আমাদের শিক্ষামন্ত্রী সংসদে বলেছেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটা প্ল্যাটফরম তৈরি করা হচ্ছে। আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে সেটির জন্য অপেক্ষা করছি। রাষ্ট্রীয় একটা সমাধান করা হলে তখন ছাত্রছাত্রীদের সেটি ব্যবহার করতে আগ্রহী করা যায়। জোর করে কিছু একটা চাপিয়ে দেয়া হলে সেটি সবসময় কাজ করে না!

 

৩.

 

অনেকদিন থেকে লকডাউনে আটকা পড়ে আছি। প্রথমদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সেরকম কাউকে চিনতাম না। এখন ধীরে ধীরে অনেক পরিচিত মানুষজনকে করোনায় আক্রান্ত হতে দেখছি, শুধু একজন নয়, বেশির ভাগ সময়েই স্ত্রী-পুত্র-সন্তানদের নিয়ে পুরো পরিবার। তবে আশার কথা, তাদের বেশিরভাগের মাঝেই কোনো উপসর্গ নেই এবং দেখতে দেখতে সবাই ভালো হয়ে যাচ্ছেন।

 

তবে তার ভেতরেও মাঝে মাঝে মন খারাপ করা খবরও পাই, প্রিয়-পরিচিত কেউ কেউ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন। সেরকম একজন হচ্ছেন মেয়র কামরান। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি সিলেটে, একজন সিলেটে থাকবে আর মেয়র কামরানের সঙ্গে পরিচয় থাকবে না সেটি তো হতে পারে না।

 

তাই মেয়র কামরানের মৃত্যুটি আমাকে বিষণ্ন করে তুলেছে। একটা ঘটনার কথা আমার মনে আছে, তখন বিএনপির আমল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টররা হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দিল, আর ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের এক ধরনের গোলমাল শুরু হয়েছে। তখন কথা নেই বার্তা নেই পুলিশ এসে গুলি করে আমাদের একজন ছাত্রকে মেরে ফেলল।

 

স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে, ক্ষিপ্ত ছাত্ররা এসে ভিসির বাসায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, সব মিলিয়ে একটা ভয়ংকর অবস্থা। পুরো ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা, উত্তেজিত মানুষের চিৎকার, হইচই, ছোটাছুটি। তার মাঝখানে আমি আর আমার স্ত্রী ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করছি।

 

হঠাৎ আবিষ্কার করলাম দুজন কম বয়সী মানুষ আমার পেছনে পেছনে হাঁটছে, আমি যেখানে যাই তারাও পিছু পিছু সেখানে যায়। আমি একসময় একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনারা কারা? কী চান?’

 

তাদের একজন বলল, ‘আমাদের মেয়র কামরান পাঠিয়েছেন। এরকম গোলমালের সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। আমাদের পাঠিয়েছেন আপনার সঙ্গে সঙ্গে থাকার জন্য, যেন এ গোলমালের সুযোগ নিয়ে আপনাকে কেউ কিছু করতে না পারে।’ আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার জন্য তার এ ভালোবাসার প্রতিদানটুকু আমি তাকে কেমন করে দেব?

 

একইভাবে কামাল লোহানীও চলে গেলেন। শেষবার শিল্পকলা একাডেমির একটা অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মনে হয় তখন তার দৃষ্টি নিয়ে একটু সমস্যা, দূর থেকে আমাকে চিনতে পারেননি। মঞ্চে যখন পাশাপাশি বসেছি তখন চিনতে পেরে আপনজনের মতো আমার খোঁজখবর নিলেন।

 

এত বড় একজন মানুষ, যিনি নিজেই একটি কিংবদন্তি, একটি ইতিহাস, তার পাশে বসে আন্তরিকভাবে কথা বলা আমার মতো একজন মানুষের জন্য কত বড় সৌভাগ্যের একটা ব্যাপার। তিনিও চলে গেলেন; মনে হচ্ছে মাথার ওপর থেকে একটি একটি করে ছায়া সরে যাচ্ছে।

 

মনে হচ্ছে, বিশাল একটা প্রান্তরে এখন আমরা একা একা দাঁড়িয়ে আছি।

 

২৪ জুন ২০২০

 

মুহম্মদ জাফর ইকবাল : লেখক, শিক্ষাবিদ






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*