সাংবাদিক কাজলের মুক্তি চেয়ে ৭২ লেখক-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীর বিবৃতি
ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের মুক্তি চেয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ৭২ জন লেখক-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী। একের পর এক শুনানি হলেও সাংবাদিক কাজলের জামিন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
শুক্রবার(২৬ জুন) আলোকচিত্র শিল্পী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ বিবৃতি প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাংবাদিক কাজলের নিখোঁজ হওয়া ও পরবর্তীতে নিজ দেশে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বন্দি থাকা এবং জামিন না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তার মুক্তির দাবি জানিয়ে আমরা ৭২ জন জন লেখক-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী বিবৃতি দিয়েছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, গত মার্চের ১০ তারিখ সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হন। নিখোজেঁর ৫৩ দিন পরে, মে মাসের ৩ তারিখ, ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে বেনাপোল বর্ডারে তাকে ‘ঘোরাফেরা’ করতে দেখা যায়, মানে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। যাদের কাছের কেউ এমনভাবে হারিয়ে যাননি তারা জানবেন না এই খুঁজে পাওয়া কতোটা স্বস্তির। তবে এরপরই তাকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
নিজ দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আশাহত হলাম যখন দেখলাম, পরিবার ও নিজ কর্মজীবনে ফিরে আসার বদলে তিনি অনুপ্রবেশের মামলায় আটক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে (জিডি)। আমরা উদ্বেগজনকভাবে আরও লক্ষ্য করলাম, সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে ডিএমপির তিনটি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আলাদা তিনটি মামলা হয়েছে। সেগুলোতে এতদিন ধরে তাকে এরেস্ট দেখানো হয়নি বলে আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে তিনি জামিনের আবেদনও করতে পারেননি। সংবাদমাধ্যম মারফত জানা গেল, নিখোঁজের ১০৮ দিন এবং পুলিশ কাস্টডিতে থাকার ৫২ দিন পরে আগামী ২৮ তারিখেই তাকে গ্রেফতার দেখানোর কথা এবং সেই সঙ্গে রয়েছে তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন। যা আমাদের সকলকে উদ্বিগ্ন করছে।
কাজলের দীর্ঘদিন কারাভোগে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আজ ১০৩ দিন, যখন আমরা এই বিবৃতি দিচ্ছি। আমাদের বার বার মনে হচ্ছে একজন সাংবাদিক, একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক রাষ্ট্রের একটি সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলেছেন বলে তাকে এভাবে হেনস্তা হতে হবে? মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও, মতপ্রকাশের ‘অপরাধে’ একজন আলোকচিত্রীকে এভাবে কারাবন্দি জীবন যাপন করতে হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি উদ্বেগের। এটি গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ করছে।
বিবৃতি দেওয়া ৭২ জন লেখক-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীর মধ্যে আছেন- বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টের চেয়ারপারসন খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, মিশিগানের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আজফার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, শিক্ষক ও নাট্যকর্মী সামিনা লুৎফা, শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপি, শিল্পী মাহবুবুর রহমান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, সঙ্গীতশিল্পী এলিটা করিম, কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার প্রমুখ।