প্রাণের ৭১

মীরসরাই ট্রাজেডির নয় বছর-মোহাম্মদ হাসান

চট্টগ্রামের মীরসরাই ট্রাজেডির নয় বছর। বছর ঘুরে আবারও এল স্মরণকালের মর্মান্তিক ট্রাজেডির দিন ১১ জুলাই। কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে মীরসরাই ট্রাজেডির ৯ বছর। বাংলার বুকে সবচেয়ে ভয়াবহ মীরসরাই ট্রাজেডির নবম মৃত্যুবার্ষিকী । সেই ভয়াবহ করুণ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১১ সালের ১১ জুলাই সোমবার দুপুরে দেখেছিল পুরো বিশ্ব।

১১ জুলাই দিনটি অনেকের কাছে নিছক একটি সাধারণ দিন হলেও কারো জন্য চরম বেদনার। ক’জোড়া চোখের নিরন্তর হাহাকার। সময়ের পদধ্বনিতে বারংবার বেজে যায় ব্যথাতুর বাবাদের নোনাজলের বিউগল। বেদানার্ত মায়েদের মুহ্যমান বোবা চিৎকার।

২০১১ সালের এ দিনে মীরসরাই স্টেডিয়াম থেকে একটি ফুটবল টুর্ণামেন্টের খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৪৪ জন স্কুল ছাত্র। এছাড়া ওইদিনই সন্তানের মৃত্যু শোকে মারা যান এক বাবা। চালকের অবহেলায় শিক্ষার্থী বোঝাই ট্রাকটি রাস্তার পাশে খালে পড়ে দুর্ঘটনাটি হয়। এ
রপরই উদ্ধার তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পড়েন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় জনতা। একে একে সারিবদ্ধ লাশ দেখে ওইদিন শোকাহত স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সহপাঠিদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আবু তোরাব হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা করা হয় তিনদিনের রাস্ট্রীয় শোক।

নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের সমবেদনা জানাতে সেদিন ছুটে এসেছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া,সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী,মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান।

দুর্ঘটনা পরবর্তী দীর্ঘ ৯ বছর পার হলেও প্রিয়জন হারানো পরিবার ও নিহতদের সহপাঠীসহ আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়, আবুতোরাব কলেজ, আবু তোরাব প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঘাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সে দিনের সে ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়ায়। দুর্ঘটনার জন্ম দেওয়া সে মৃত্যুকূপ (বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় সড়কের পার্শ্ববর্তী খাদ) ভরাট করে নিহতদের স্মরণে নির্মাণ করা দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’ বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা।তাদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মাণ করা স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যেন তাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আর সাবধান করছে মানুষকে।

মীরসরাই উপজেলায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আবাসভূমি খৈয়াছরা, মায়ানী, মঘাদিয়া, সাহেরখালী ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে এখনও শোকের মাতম কাটেনি। চারটি ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম হলো- মধ্যম মায়ানী, পূর্ব মায়ানী, পশ্চিম মায়ানী, সরকার টোলা, মাষ্টার পাড়া, শেখের তালুক, কচুয়া, দরগাহ পাড়া, মঘাদিয়া ঘোনা, মঘাদিয়া, পশ্চিম খৈয়াছরা।

মীরসরাই ট্র্যাজেডিতে মধ্যম মায়ানী গ্রামের সর্বোচ্চ স্কুল ছাত্র নিহত হয়। এ গ্রামের নিহত হয়েছে ১৬ জন স্কুল ছাত্র। এছাড়া আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার ৩ জন, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন, আবুতোরাব এসএম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন, ২ জন অভিভাবক ও ১ কিশোর নিহত হয়। স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত হয় ‘আবেগ’ ও ‘অন্তিম’।

চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো, দুর্নীতি বন্ধ এবং মোটরযান আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়ে আসছে প্রতি বছর মীরসরাই ট্র্যাজেডির স্মরণসভায়।
লেখকঃমোহাম্মদ হাসান,সাংবাদিক ও কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*