স্বাস্থ্য খাতে লাগামহীন দুর্নীতি দ্রুত তা বন্ধ করতে হবে
করোনা মহামারির কারণে দেশ আজ এক ভয়ানক বিপদে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অর্থনীতির বিপর্যস্ত দশা। বহু মানুষ আয়-উপার্জনহীন হয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। সরকারের নানা সহায়তা সত্ত্বেও অতি দরিদ্র মানুষের একটি বড় অংশই আজ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। দেশের এই ভয়ংকর বিপদে মানুষ যখন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তখন এক শ্রেণির নীতিবিবর্জিত মানুষ একে নিজেদের আখের গোছানোর বড় সুযোগ মনে করছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, এরা নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের এমন অনিয়ম রোধ করার দায়িত্ব যাদের, তাদের বিরুদ্ধেও অনিয়মে জড়িত থাকার অনেক অভিযোগ পাওয়া যাাচ্ছে। তাহলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে কিভাবে?
প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, করোনা পরীক্ষার কিট আমদানি ও সরবরাহ নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আরটি-পিসিআর প্রযুক্তির পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রতি সেট কিটের বেসরকারি বাজারমূল্য যেখানে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, সেখানে এত দিন সেটি সরকারিভাবে কেনা হয়েছে দুই হাজার ৭০০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি সেটে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এরই মধ্যে ১০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই দামে প্রায় ১৫ লাখ কিট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সরবরাহও করেছে। এক হাজার ১০০ টাকা অতিরিক্ত ধরলেও এর জন্য সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে অতিরিক্ত ১৬৫ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের নতুন পরিচালক জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিষয়টি তাঁর নজরে আসে এবং তিনি প্রতি সেট কিটের দাম ৫০০ টাকা কমিয়ে দুই হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করেন। তাঁর মতে, এতেও সরবরাহকারীদের ভালো লাভ থাকার কথা। কিন্তু অনেক সরবরাহকারী কিট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কিটের সাময়িক সংকটও দেখা দিয়েছিল। শুধু কিট সরবরাহ নয়, করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া নিয়েও আছে অনিয়মের অভিযোগ। জানা যায়, এমন অনেক হাসপাতাল বা ক্লিনিককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাদের করোনাভাইরাসের আরটি-পিসিআর পরীক্ষার উপযুক্ত যন্ত্রপাতিই নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা না করেই এসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিল কিভাবে? আবার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে কারা কী করছে, তা মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। ফলে অনুমতিপ্রাপ্ত অনেক প্রতিষ্ঠান করোনামুক্ত থাকার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। সম্প্রতি একই অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নেমেছে। জানা যায়, এ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করেছে। জাতির এই দুর্দিনে যারা জনস্বাস্থ্য নিয়ে দুর্নীতিতে মেতেছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিতে হবে।সমকাল