পরীক্ষায় আট বিষয় ফেল! দৌড়ে রাজবাবার সন্ধানে ‘রাজবাবা’ নেই!
রাজীব কুমার দাস বাবা ভাবনায় কান্না আজ নিউটনের মনটা ভালো নেই! ছেলেবেলা রাজবাবার বুদ্ধি-সিদ্ধিতে বেজায় পাকা! ইঁচড়ে পাকা হাতে-হালখাতার মলাট ঘঁষে বুদ্ধিবাবা-সিদ্ধিবাবা সেজে একসময় নিজের বাবা হারিয়ে পড়শি রোষানলে ‘নিউটন’ নামেই সবাই চেনে। বাহ মডার্ন স্মার্ট! বিজ্ঞানীর নাম। বেশ জোশ! গতিসূত্রের দরকার নেই! আপেল খেতে পারলেই নামের আদিখ্যেতা চাপা পড়ে যাবে। সামনে এসএসসি। নিউটনের জিপিএ-৫ দরকার! আগে ‘নিরব’ নামে বাবার ধমকে ঝিমিয়ে-ঘুমিয়ে একটু পড়লেও এখন নিউটনে বাদ। আপেল খেলে চলবে, রাজবাবাই সব করে দেবেন! স্কুলব্যাগে চাকু, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, নাইলন দড়ি, কনডম, মোটরসাইকেলে বেশ। পরীক্ষায় আট বিষয় ফেল! দৌড়ে রাজবাবার সন্ধানে ‘রাজবাবা’ নেই! মাথা ঠান্ডা ঘামে শীতল পরশ! ‘প্রেম বাবার’ দেখা, ‘তুই পারবি, তোর দ্বারা সব হবে। সিনেমা প্রেমপিয়াসী, বাবা কেন চাকর, প্রেমের মরা জলে ডোবে না ছবি দেখেছিস? প্রেমে পড়েছিস?’ দুঃখের মাঝে হাসি! নিউটনের সাবলীল উত্তর, ‘আরে বলো কি প্রেমবাবা? তুমি ছাগু বাবা হলে ভালো হতো! প্রাইমারি স্কুলের পড়া! হাই স্কুলে কেউ পড়ে?’ তালা বাবা, শিকল বাবা, চুম্মা বাবা, নেংটা বাবা, বিড়ি বাবা, মাস্তান বাবা, চাঁদ বাবা, ফুল বাবা, কাম বাবা, পাগল বাবা, জ্বীন বাবা- সব বাবার ইঁচড়ে নিউটন নাকানিচুবানি খাইয়ে-নাইয়ে এখন ‘বাবার বাবা’। নিউটনের উপলব্ধি- সব বাবাই ভণ্ড বাবা। সব বাবাকে ঘিরে ‘প্রিয় বাবা’ হারিয়ে গেছে। বেশ আফসোস! এসএসসি পাস করা হয়নি! রাজটিকা পড়ার মোহ নেই। নিউটন নামে আপেল খেয়ে কারো কবজি, সহপাঠীর ঠ্যাং, নারীর সম্ভ্রম কেড়ে কোর্টের হাজিরার আহাজারি! মুরগি চোর, কসাই, রেলের কুলি, মাস্তান বাবারা কখন, কোথায়, কিভাবে সহজ-সরল নিরবদের জীবনে হাতেখড়ি ‘রাজবাবা’ সেজে নিখাদ বাবা ভাবনায় সারাজীবন কান্না দিয়ে যান, তা ভুক্তভোগী জানেন। **** বিন্দু সমাচার বিন্দু-বিন্দু সিন্ধু ভাবনায় বিত্ত। নিম্ন-মধ্য-উচ্চবিত্ত! বিত্ত-বৈভবের অমানবীয় ইন্দ্রজালে উচ্চবিত্ত যখন নিজ অবস্থানে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-ভেদ-উচ্চতা হারিয়ে ফেলে, তখন সমাজের অবস্থা হয়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কবলে দয়ায় আশ্রিত মাছধরা নৌকার মতো। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের যাপিত জীবনে অমানবীয় টানাপোড়েন হাহাকার হতে শুধুই বাঁচার জন্যে জন্মে ‘অধিকার’ সমস্বর চিৎকার! গড়ে ওঠে শ্রেণি সংগ্রামের তাগিদ। বিলাসী জীবনে থিতু উচ্চবিত্তের লাগাতার তুচ্ছতাচ্ছিল্য সামন্তপ্রভু হিংসুটে আচরণে জন্ম দেয় ভয়ানক হিংসা ও ক্ষোভ! ‘গুড ফর নার্থিং’ ভাবনায় এ হতচ্ছাড়া শ্রেণি হতে উঠে আসে নজরুল, সুকান্ত, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, চে গুয়েভারার অগুনতি অনুসারী। শুধু বুর্জোয়া, অজগর এ উচ্চবিত্ত শ্রেণির দুর্নমিত ভাবনাকে সাম্যে ফেরাতে লড়াইয়ে কালের স্রোতধারায় হারিয়ে গেছে অসংখ্য সম্প্রদায়, ঝরে গেছে লক্ষ-কোটি প্রাণ। তবুও সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আপস করেননি তাঁরা! নির্মমতার শেষ ধাপেও বুক চিতিয়ে গেয়েছেন সাম্যের জয়গান। সাম্যের জয়গান নিয়ে সব বিত্তের মানবীয় তাগিদে জাতির জনকের হাত ধরে পথচলা শুরু হলেও উচ্চবিত্ত বিলাসী হিংসা ষড়যন্ত্রে একলাফে বিত্ত-ইন্দ্রজাল নিয়ে বেড়ে চলা এ পঙ্গপালের দলকে কেউ থামাতে পারেনি। যাঁরাই একটু ‘বিত্ত চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ করার স্পর্ধা দেখিয়েছে কিংবা চেষ্টা করেছে! তাদের সবাইকে দিগম্বর হতে হয়েছে। এ হলো ভয়ঙ্কর রূঢ় বাস্তবতা! ভয়ঙ্কর বিত্ত মানসিকতা এখন সবখানে। পরিবার-সমাজে যতোই জ্ঞানী-গুণি-বিজ্ঞানী হউক না কেন? ‘বিত্ত থার্মাল’ পারদ যে কতো ভয়ানক মধ্য-নিম্নবিত্ত মানসিক জ্বালা! একমাত্র ভুক্তভোগীই ভালো জানেন। অফিসের কর্তাব্যক্তিটি একসময় বিন্দু নিয়ে গবেষণা করলেও বিন্দু-বিসর্গ ভুলে ইনি এখন উৎকৃষ্ট বিত্ত প্রজাতির একজন। নিকৃষ্ট বিত্ত প্রজাতিকে সহ্য করতে না পেরে জার্মান শেফার্ড ‘টমি’ মাদি কুকুর নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। বাসায় টমির সাথে সময় কাটান, বাকি সময় পৃথুলা বউয়ের ধমক খেয়ে অসভ্য ‘মধ্য-নিম্ন’ কেন এতো খাই-খাই’ পেটের গবেষণা করেন। সৎ পরিশ্রম প্রজাতির ঘামের গন্ধ সহ্য করা দূরে থাক; খাতা-কলম অজগরের গোল প্যাঁচে গিনিপিগ করে আগামী-বর্তমান-ভবিষ্যতকে খেয়ে ফেলেন। খাতা-কলমে অজগরের নেই কোনো জবাবদিহিতা! সিন্ধু চিন্তাতে যা গেলেন, সব হাড্ডিসহ তরল করে দেন। ফুল বাগান, পশু-পাখি, এলাচ লেবু, বাহারি খামারবাড়ির তীব্র প্রতিযোগিতা। নিরিবিলি পরিবেশে ছোট-বড়-মাঝারি লক্ষ অজগরের কালো খসখসে জিহ্বা হিস-হিস করে চলেছে। সে জিহ্বার তীব্র আকর্ষণে ‘বহুরূপী বিষ’ ধীরে-ধীরে প্রবেশ করছে সমাজে। অক্ষম আক্রোশ নিয়ে বেঁচে থাকা নপুংসক ভয়ানক বিত্ত প্রতারিত মানুষকে সুড়সুড়ি দিয়ে।
লিখেছেন: রাজিব দাশ, ইন্সপেক্টর, বাংলাদেশ পুলিশ।