শেখ হাসিনা’র জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল:মোহাম্মদ হাসান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম নিয়েছিলেন বলেই আজকে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। একইভাবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের মহান স্থপতির রক্তে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম না হলে বাংলাদেশ আজকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতো না। বিশ্ব উন্নয়নের রোল হিসেবে পরিচিত পেত না। সেই গণমানুষের নেত্রী, বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার, গণতন্ত্রের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটির ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু গণতন্ত্রের মানসকন্যাই নয়, (মানবতার জননী) হিসেবে সারাবিশ্বে প্রশংসিত।
সরল সহজ সাদামাটা জীবনের অধিকারী শেখ হাসিনার গোটা জীবন নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম হচ্ছে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই বাঙালির অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে অগ্রণী সৈনিক। দূরদর্শিতার চিহ্ন যিনি ইতিমধ্যে রেখে চলেছেন সারা বিশ্বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তির দর্শন, চেতনা আর মানবতাবাদী পদক্ষেপ সারা বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যা সমাধানের আলোকবর্তিকা হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছেন তিনি। শান্তিতে নোবেল জয়ীদের ভূমিকা যখন প্রশ্ন বিদ্ধ তখন বিশ্বের মানচিত্রে শান্তির পতাকা হাতে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ের মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে প্রশংসিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মধ্যমণি ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার উদারতা ও মানবিকতা বিশ্ব নেতারা প্রশংসা করেছেন। বিশ্বের শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোও জননেত্রী শেখ হাসিনার উদারতাকে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধিতে দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ সেপ্টেম্বর ছুটে গিয়েছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গারাও তাদের ভালবাসার নিদর্শন দিচ্ছেন ভিন্নভাবে। নবজাতক শিশুর নাম রাখছেন বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা ও শেখ হাসিনা। তিনি শান্তির প্রতীক। শান্তিতে নোবেল জয়ীরা যখন অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনার শান্তির পতাকা উড়িয়ে চলছেন বিশ্ব দরবারে। দেশ ও বিদেশে মানুষের হৃদয়ের যে ভালবাসা তিনি পেয়েছেন তা নোবেলের চেয়ে শত কোটিগুণ বেশি দামী। কারণ মানুষের ভালবাসার চেয়ে অন্য কিছু দামি হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ই দেননি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অশান্ত পাহাড়ে শান্তির বার্তা দিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। এ হত্যাকাণ্ডের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। সে অবস্থার পরিবর্তন হয় ১৯৮১ সালের ১৭ মে। সেদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন সর্বস্বহারা শেখ হাসিনা। কাণ্ডারি বিহীন, দিগভ্রান্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সে সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন বলেই ঘাতকের বুলেট তাকে তখন স্পর্শ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ দেশের সব মানুষেরই ভরসা ছিল এই যে, একদিন ফিরবেন তিনি। পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে এগিয়ে নেবেন দলকে, সর্বোপরি দেশকে। বাংলা মায়ের সন্তান তিনি। ফিরে এলেন আবার সেই মায়েরই কোলে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার নামের আগে পরে কোন বিশেষণ যোগ করার দরকার হয় না। এক কঠিন সংগ্রামের পথ বেয়ে নিজ প্রতিভায় বিকশিত তিনি। বিশ্বমানবের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত আজ তিনি। ছত্রিশ বছর ধরে একটানা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকা, তিন-তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া রূপকথার বিস্ময়কর কাহিনীর মতো যেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শেখ হাসিনা নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং এই আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। পিতার মতো দুর্জয় সাহস নিয়ে দেশের রাজনীতি ও জনগণের পক্ষে নিজের দৃঢ় অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন, যুদ্ধ করছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনও এগিয়ে চলছেন। বিদেশে থাকায় মধ্যরাতের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো ১৯ বার তাকে হত্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা জানে, শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন বার্তা পেয়েছে। পথ হারানো জাতি দিশা পেয়েছে। সে কারণে গত ছত্রিশ বছর ধরে তাকে হত্যার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়। তবে বেঁচে গেছেন যেন অলৌকিকভাবে। মহান স্রষ্টার সমস্ত কৃপা বুঝি তার প্রতি অপরিসীম। তাই ঘাতকের ঘৃণ্য তৎপরতা কাজে আসেনি। পিতার সাহস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাকে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে আসন দিয়েছে। তার সবচেয়ে বড় সাফল্য, যুদ্ধের ময়দান থেকে হটে না যাওয়া। তার চারদিকে এখনও পরাক্রান্ত বহু শত্রু। যুদ্ধের ময়দানে একাই লড়ছেন উচ্চ করে শির। এক পা পিছু হটার নিদর্শন নেই। সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন, স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ এবং দেশ ও জনগণের বিপদের মুহূর্তে দেশত্যাগ বা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কোন ঘটনাই নেই তার জীবনে। তাই তিনি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের একজন সফল রাজনৈতিক নেত্রীও রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগ ও দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঘোর দুর্দিনে সম্পূর্ণ অভাবিত ও অপ্রত্যাশিতভাবে দেশের রাজনীতিতে চমক লাগিয়ে সব দ্বিধা, সঙ্কোচ ও সংসারের বন্ধন ত্যাগ করে রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথে এসে না দাঁড়াতেন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির পতাকা আবার সাহসের সঙ্গে ঊর্ধ্বে তুলে না ধরতেন, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা আজ কী দাঁড়াত, তা ভাবতেও শঙ্কা হয়। এই তিনিই আজকের জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী এবং একইসঙ্গে বিশ্ব নেত্রী, বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে নিজেকে সমাসীন করার জন্য প্রস্তুতি পর্ব সমাপন করে সমুখে শান্তি পারাবার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন দৃঢ় ও দীপ্ত পদক্ষেপে। ভূগোলের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল বিশ্বভাবনাকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত জানাতেও পিছপা নন। বিশ্বজুড়ে জঙ্গিবাদ, দ্বন্দ্ব, হানাহানি, সংঘাত, সংঘর্ষ; আক্রান্ত বারুদের ঝনৎকারের বিপরীতে শান্তির বার্তা তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে যে জঙ্গিবাদের বিস্তার, তার নির্মূলে তিনি সোচ্চার। নিজ দেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের তিনি দমন করছেন সাহসের সঙ্গে। নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেক উচ্চতায় তিনি নিয়ে গেছেন, যে কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের জন্য রোল মডেল।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।