প্রাণের ৭১

শিশুদের ভোটাধিকার নেই,অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের উপর নির্ভর করে:মোহাম্মদ হাসান

এ বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ৫ অক্টোবর হওয়ায় ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিশু দিবস এবং ৫-১১ অক্টোবর শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২০ পালন করা হচ্ছে। বিশ্ব শিশু দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন।

এবছরে বিশ্ব শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য : ‘‘শিশুর সাথে শিশুর তরে বিশ্ব গড়ি নতুন করে’’।

শিশুদের ভোটাধিকার না থাকায় তারা এমন মানুষদের উপর নির্ভর করে যারা তাদের অধিকারকে সম্মান করা, সংরক্ষণ করা ও পূরণকরতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই মানুষগুলো হলেন:সকল পর্যায়ের নেতা, সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, সরকারি চাকুরিজীবী, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা, বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সমাজকর্মী, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও অন্য অনেকে। শিশুরা তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনা। কিন্তু তারা অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের উপর নির্ভর করে।

শিশুরা বিচারক, পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষক, সমাজকর্মী, ধর্মীয় নেতা, স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যম পেশাজীবি এমন ব্যক্তিবর্গের উপরও নির্ভর করে যারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ।

গণমাধ্যম সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে এবং শিশুদেরকেও তাদের চিন্তার বিন্যাসে সহায়তা করে। শিশুরা মিডিয়ার ভোক্তা কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সব সময় তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকেনা। মূলধারার মিডিয়ায় শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে, মিডিয়া প্রোগ্রাম তৈরিতে তাদেরকে প্রভাবিত করতে হবে এবং এতে করে মিডিয়াতে তাদের কথা বলার সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত সামাজিক উন্নয়নে তাদের খুঁটি শক্তিশালী হবে।

ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করার জন্য শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। কারন, ১৫-১৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠি যারা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠির ৮ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের মধ্যে প্রায় ৩.৩ শতাংশ নিয়মিতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের ভালো দিক থাকলেও, শিশুদেও জন্য এতে বেশ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। কিছু কিছু অনলাইন ঝুঁকি তাদের শুধু ক্ষতিই করবে না, বরং তাদেরকে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে ফেলবে, যেমন, যৌনউত্তেজনা নিয়ে বড় হওয়া বা যৌনতায় জড়িয়ে যাওয়া ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া; কিশোর-কিশোরীদের আপত্তিকর ছবি তৈরি ও বন্টন করা; শিশু পাচার করা; শিশুদের দৈহিক ও মানসিকভাবে অপব্যবহার করা; নেশাজাতীয় দ্রব্যের অবৈধ বিক্রি ও বন্টন; প্রতিহিংসামূলক পর্নোগ্রাফী, হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক আচরণ।

প্রারম্ভিক শৈশব হচ্ছে সেই সময়টা যখন শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা প্রয়োজন। শিশুর জন্মের পর প্রথম আট বছর তার বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এটি সময়টি পরিবর্তনের এবং সে পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের। শিশুর প্রথম তিন বছর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময়ে শিশুর মস্তিস্ক নমনীয় থাকে এবং দ্রুত বিকশিত হয়। শিশুর ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিস্কের বৃদ্ধির ওপর কড়া প্রভাব ফেলে । এই সময়ে অবহেলা বা নির্যাতন শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আচরণ ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।

শিশুর বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান- পুষ্টি, উদ্দীপনা, সুরক্ষা ও শিক্ষা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিশু, বাবা-মা ও সেবাদাতাদের সক্ষম করে তোলার সম্ভাব্য সবকিছু নিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। সে কাজ সমূহকে বলা হয় প্রারম্ভিক শৈশব সেবা বা আর্লি চাইল্ডহুড কেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অথবা ‘ইসিসিডি’।

বাংলাদেশে অধিকাংশ অভিভাবকের শিশুর সঠিক যত্ম ও প্রতিপালন সম্পর্কে জ্ঞান এখনও বেশ সীমিত। বাবা-মা কাজে থাকার সময় ছোট শিশুরা যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

শিশুর শিক্ষাগত সাফল্যের জন্য অভিভাবকরা খুব বেশি যত্মশীল হলেও অধিকাংশই জানেন না যে, উদ্দীপনা ও নিরাপত্তার অভাব শিশুর শ্রেণিকক্ষের কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশে শিশুর প্রাথমিক বিকাশের চ্যালেঞ্জগুলো সহিংস আচরণ, জ্ঞানের সীমিত সুযোগ এবং মৌলিক সেবাগুলোর ঘাটতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে তিনটি শিশু মানসিক নির্যাতনের এবং প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে দুটি শারীরিক শাস্তি ভোগ করেছে।

বস্তি, প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চল এবং সুবিধাবঞ্চিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর শিশু, যাদের মৌলিক সেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত, তারাই বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

গেলো বছর শিশু অধিকার সপ্তাহে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবে, যাতে আজকের শিশুরা সামনের দিনগুলোতে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ লাভ করে। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত করে আমাদের শিশুদের একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করা।

১৯৬৩ সাল। শেখ মুজিবুর রহমান তখনো বঙ্গবন্ধু উপাধি পাননি, জাতির পিতাও হননি। তবে আওয়ামী লীগের বড় নেতা। সেই সময়ই তিনি শিশুদের টানে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে কচি-কাঁচার মেলা আয়োজিত শিশু আনন্দমেলায় এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘এই পবিত্র শিশুদের সঙ্গে মিশি মনটাকে একটু হালকা করার জন্য।’ ছোট্ট এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শিশুদের প্রতি তাঁর আন্তরিক ভালোবাসা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। তথ্য সূত্রঃ ইউনিসেফ ও সংবাদপত্র ও সাময়িকী।

সম্পাদনাঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*