অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ৯ দিনের মাথায় মেলবোর্নে বাড়ির মালিককে ছুরিকাঘাত করে ৪২ বছরের সাজা ভোগ করতে থাকা মোমেনা সোমা কারাগারে বসেই আরেক নারী বন্দিকে কুপিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম দ্য অস্ট্রেলিয়ান ডট কম।
দ্য অস্ট্রেলিয়ান এবং ব্রিটেনের ডেইলি মেইল জানায়, বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) ভিডিও ট্রায়ালে সোমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার রেইভেনহল জেলে তিনি সহবন্দিকে কুপিয়ে জখম করেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ওই বন্দিও সোমার সমবয়সী।
এই ঘটনায় সোমাকে সামনের বছর মার্চে আবার আদালতে তোলা হবে। ম্যাজিস্ট্রেট ক্যারলিন বার্নসাইড জানান, করোনার কারণে শুনানির জন্য কমপক্ষে ১ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে।
২৭ বছর বয়স্ক মোমেনার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। তার বাবা একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করেন। দুই বোনের মধ্যে মোমেনা বড়। ঢাকার মাস্টার মাইন্ড স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেল শেষ করে মোমেনা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপরই তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান।
২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যান সোমা। এর নয় দিনের মাথায় তিনি মেলবোর্নে রজার সিংগারাভেলু নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরি নিয়ে হামলা চালান। হামলার পরপরই সোমাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের আইন কারাবিধি অনুযায়ী, সোমাকে কমপক্ষে ৩১ বছর ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে। এরপরেই তিনি প্যারোলের আবেদন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, বিচারের সময় অনেক তথ্য বের হয়ে এসেছিলো ।মোমেনা সোমা বাংলাদেশ থেকে এসে প্রথম দিন মেলবোর্নের থেকে যে বাসায় ছিলো, সে বাসায় তার বিছানার ম্যাট্রেস সজোরে আঘাত করতেএই দেখে বাড়ির মালিক তাকে দ্রুত অন্যত্র চলে যেতে বলে । তারপরই সে উঠে রজার সিঙ্গারাভেলোর বাসায়।
সন্ত্রাসী ঘটনার বিচারের সময় সোমা বলেছিলো যে, সে অস্ট্রেলিয়া এসেছে শুধু সন্ত্রাস জিহাদ করতে । রায়ের সময় বিচারক টাইলোর বলেছিলেন,”তোমার ভয়ংকর কাজ সারা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে আতঙ্ক তৈরী করেছিলো কিন্তু কেউ তোমাকে শহীদ করেনি,কেউ তোমাকে ইসলামের আলোকিত মানুষও মনে করেনি,কেউ তোমাকে সবুজ পাখাও লাগিয়ে দেয়নি জান্নাতে যাবার, তুমি শুধু একটা সন্ত্রাসী হিসেবেই নিজেকে পরিচিত করেছো।
মোমেনা সোমা ২০১৫ সালেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় সে যাত্রায় তার আর তুরস্ক যাওয়া হয়নি। সে সময় মোমেনা সোমার ছোট বোন আসমাউল হোসনাকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছিলেন বাংলাদেশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
ওই সময় সোমার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে ঢাকার মিরপুরে পুলিশের ওপর হামলা করে হোসনা। পরে পুলিশ হোসনাকে গ্রেপ্তার করে। তার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই উঠে আসে এসব তথ্য।
দ্যা অস্ট্রেলিয়ান ডট৷ কম