বিমান বাহিনীকে বুকে সাহস নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে চলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
মোহাম্মদ হাসানঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিমান বাহিনীকে উন্নত ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, দেশের মানুষের কল্যাণ করা এবং সার্বিক উন্নতি করাটাই আমাদের লক্ষ্য।
আজ ২০ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি, যশোরে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ – ২০২০ (শীতকালীন) অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কাজেই আমাদের বিমান বাহিনীর প্রতিটি সদস্য এবং বিশেষ করে নবীন ক্যাডেট যারা, তাদের সবাইকে আমি বলবো- আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ ও জাতি। সে কথা মনে রেখেই বুকে সাহস নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে চলতে হবে। আর নিজেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আমি ক্যাডেটদের বলবো বিমান বাহিনীর অনন্য প্রশিক্ষণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তোমরা নিজেদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলবে যাতে আমাদের এই বাংলাদেশ তোমাদের মত তরুণদের কাছে যেটা প্রত্যাশা করে সেটা তোমরা পূরণে সক্ষম হও।
প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশে আরও বলেন, মানসম্মত ও কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে তোমাদের যে কর্মময় জীবন আজ শুরু হলো তোমরা তাতে সফল হও- আমি এই কামনা করি। জাতির পিতার আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে তোমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মাতৃভূমি রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিমান বাহিনীতে শিগগিরই যুক্ত হবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল সিস্টেম, মোবাইল গ্যাপ ফিলার র্যাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স র্যাডার। ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের সংমিশ্রণে শিল্পনির্ভর জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশে বিমান বাহিনীর ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ এর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিমান বাহিনী আরও একধাপ এগিয়ে যাবে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে সরকার সবসময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাশে থাকবে। জাতির পিতা সে লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেছিলেন জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি। ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স র্যাডারসহ নতুন নতুন সরঞ্জামাদি বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাঁর সরকার বিমান বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় আধুনিক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, র্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং মুখ্য যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক পাঁচটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান ক্রয়ের জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে, যার তিনটি বিমান ইতোমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। বৈমানিকদের উন্নততর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে আরও ৭টি অত্যাধুনিক কে-৮ডব্লিউ জেট ট্রেইনার বিমান সংযোজন করা হয়েছে এবং অচিরেই যুক্ত হতে যাচ্ছে পিটি-৬ সিমুলেটর। আমরা হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং এয়ারম্যান ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন করেছি।
তিনি আরও বলেন, এখন হয়তো কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারছিনা। তবে, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে বিমান বাহিনীকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার। তবে দেশ ও জাতির প্রতি আপনাদের দায়বদ্ধতা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবেলায় আপনাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহ অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আপনারা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিয়ে এসেছেন বিপুল পরিমাণে চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, মানবিক সাহায্যসহ বিমান বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে মালদ্বীপ, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে। করোনা প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশের মাটিতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে পরম মমতায়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উদ্যোগে লালমনিরহাটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিমান চলাচল, বিমান নির্মাণ, গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা হবে।আমি আশা করি এর মাধ্যমে একদিন হয়তো বাংলাদেশে যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং হেলিকপ্টারও তৈরি করতে সক্ষম হবে, ইনশাল্লাহ। তাছাড়া মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে একদিন মহাকাশে যাওয়াও সম্ভব হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির কমান্ড্যান্টসহ যে সকল প্রশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় আজকের এই প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ সফলভাবে সম্পন্ন হল, তাদের সকলকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট উপভোগ করেন। এসময় তাঁকে মনোজ্ঞ কুচকওয়াজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৭৭ তম বাফা কোর্স এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি-২০২০ কোর্স সম্পন্নকারীদের মাঝে ফ্লাইং ব্যাজ, ট্রফি এবং অন্যান্য পুরস্কার বিতরণ করেন। স্কোয়াড্রন জুনিয়র অফিসার শাকিল আহমেদ শ্রেষ্ঠ চৌকষ ক্যাডেট হিসেবে অনুষ্ঠানে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন।