জৌনপুরী পীর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর ডক্টরেট ডিগ্রী ভুয়া প্রমাণিত
জৈনপুরীর পীর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী প্র’তারণামূলকভাবে ‘পীর’ টাইটেল লাগানোর পাশাপাশি ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রিও ব্যবহার করেন।
তার এই ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল অনেকদিন আগেই। আব্বাসীর সংগঠনের ওয়েবসাইট তেহরিক-এ-খতমে নবুয়্যত ভিজিট দেখলেই বোঝা যায়। সেখানে লেখা রয়েছে- “ডক্টরেট হিস্টরি আরাবি, ইংরেজি ও বাংলা ৩টি ভাষাতেই দিলাম যেন বুঝার ক্ষেত্রে অসুবিধা না হয়”।
সেখানে দাবি করা হয়েছে- জৈনপুরী পীর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী নাদওয়াতুল ওলামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “Master’s Da’wa & Master’s in Islamic Fundamentals” করেছেন।
কিন্তু কোনো বিষয়ের ফান্ডামেন্টাল কোর্সের ওপর গ্র্যাজুয়েশন বা মাস্টার্স হয় কি না আমি ঠিক জানি না, তবে এমন কোনো ডিগ্রি অন্তত নাদওয়াতুল ওলামায় নেই।
নাদওয়াতুল ওলামা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়; তবে একে কলেজ দাবি করা হয় এবং এর প্রধানকে অধ্যক্ষ বলে, উপাচার্য (ভিসি) নয়। লেখা রয়েছে Kulliatul Lugatil Arabia Wa Adabiha- এর অর্থ ফ্যাকাল্টি অব এরাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড লিটারেচার।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- আরবি সাহিত্যের সঙ্গে দাওয়া বা ইসলামিক ফান্ডামেন্টালের সম্পর্ক কী?
যাই হোক, নাদওয়াতুল ওলামায় আরবি ভাষা নিয়ে কোনো ডিপার্টমেন্ট নেই, আর ফ্যাকাল্টি থাকা তো হাস্যকর ব্যাপার। তবে সেখানে আরবি ভাষার একটি কোর্স করানো হয়, যা শুধুই একটি কোর্স, কোনো ডিগ্রী নয়।
জৌনপুরী পীর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসির পিএইচডি অর্জন প্রসঙ্গে দাবি করা হয়েছে তিনি লাক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। সেখানে লেখা রয়েছে “Thesis : Musannafat Ibne Zakaria Fillugatil Arabia, Lukhnow University.”
‘লুগাত’ শব্দের অর্থ হলো শব্দকোষ। আর ‘মুসান্নাফ’ মানে শ্রেণীবদ্ধভাবে একত্রিত করা। ইবনে জাকারিয়ার কথা বলা হয়েছে; তার পুরো নাম ইবনে জাকারিয়া আল রাজি, যিনি ছিলেন প্রখ্যাত মেডিক্যাল সায়েন্টিস্ট। তার লিখিত বইগুলোর তালিকা ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়। তার নামে কোনো ‘লুগাত’ নেই। তবে কিছু বিত’র্কিত ধর্মীয় কিতাব আছে।
আমার ধারণা, ফখরুদ্দিন আল রাজি নিয়ে চাপাবাজি করতে গিয়ে ইবনে জাকারিয়া আল রাজির নাম লেখা হয়েছে। তবে ফখরুদ্দিন আল রাজিরও কোনো ‘লুগাত’ নেই।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, লাক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী বা ইসলাম সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় বা বিভাগই নেই!
এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, যাকে অনেকে ঠাট্টা করে ‘গাবগাছি’ বলেন, তার প্রশংসায় অনেকেই ইদানিং পঞ্চমুখ, যাদেরকে তিনি নিজে ইতিপূর্বে কাফের বলে আখ্যা দিয়েছেন, কখনওবা মুশরিক বলেছেন, কখনও বলেছেন, এরা মুসলমানই হতে পারে না।
এখন যদি তার কথাগুলো ওহিতুল্য হয়, তাহলে আগের কথাগুলো মেনে নিলেই হয়। এই গোষ্ঠীর এ জাতীয় দেউলিয়াপনা নতুন নয়। স্বার্থের জন্য আবর্জনাকেও তারা মাথায় রাখতে দ্বিধা করে না।
এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্যগুলো কেউ যাচাই করে দেখতে চাইলে নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট লিংকে গিয়ে দেখে নিতে পারেন। নাদওয়াতুল ওলামার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং লাক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।
লেখক: আব্দুল্লাহ হারুণ জুয়েল
পরিচিতি: কলামিস্ট, ইসলামি গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।