ফ্রান্সে সুপারিশ: করোনাজয়ীদের জন্য এক ডোজ টিকাই যথেষ্ট
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠলে তার জন্য এক ডোজ টিকাই যথেষ্ট বলে মনে করছে ফ্রান্স। গত শুক্রবার দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই সুপারিশ করেছে। তাদের ভাষ্য, এক ডোজ টিকায় যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তা কভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির দেহে এরই মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। সে কারণে এমন ক্ষেত্রে টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট।
এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) করোনাভাইরাসের দুই ডোজের তিনটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া এসব টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, টিকার দুটি ডোজ নিলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় বলে প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে জনসন অ্যান্ড জনসন করোনার এক ডোজের টিকা উদ্ভাবন করেছে। তবে তা এখনো ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পায়নি। এরই মধ্যে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্স করোনাজয়ীদের জন্য এক ডোজ টিকার সুপারিশ করল।
দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের (এইচএএস) সুপারিশে বলা হয়েছে, কভিড থেকে সেরে ওঠার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে টিকা নেওয়া উচিত। এক ডোজ টিকাই দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মনে করিয়ে দেবে, কিভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এইচএএস বলেছে, চারটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন, এমন ব্যক্তির শরীরে টিকার একটি ডোজ যথেষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। এতে আবার করোনায় সংক্রমিত হওয়া থেকে তিনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন। অবশ্য এই মুহূর্তে কোনো দেশেই করোনাজয়ীদের জন্য এক ডোজ টিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেই।
তবে করোনায় আগে সংক্রমিত হওয়া ব্যক্তিদের কিভাবে শনাক্ত করা হবে কিংবা এই সুপারিশ কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে-তা জানায়নি ফ্রান্সের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে অন্য অনেক দেশের মতন ফ্রান্সে গণ টিকাদান চলছে। সম্প্রতি এই কর্মসূচি আগের চেয়ে গতি পেলেও তা এখনও যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে ২১ লাখ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর দুই ডোজ নিয়েছেন-এমন মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০।
করোনাজয়ীদের জন্য একটি ডোজই কার্যকর হতে পারে বলে সাম্প্রতিক দুটি মার্কিন গবেষণাতেও উঠে এসেছে। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সুস্থ হওয়ার পর যারা এক ডোজ টিকা নেবেন তাদের দেহে দুটি ডোজের মতোই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
‘করোনা থেকে মুক্তি সহসাই নয়’ : সংক্রমণের গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি চললেও সহসাই করোনা থেকে মুক্তি মিলছে না বলে মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান অ্যান্ড্রিয়ে অ্যামেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসকে দীর্ঘকাল ধরে মোকাবেলার প্রস্তুতি বিশ্ববাসীর রাখতে হবে। ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান অ্যামেন এক সাক্ষাৎকারে এই সতর্কবার্তা দেন।
ইইউর রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান বললেন, ‘মনে হচ্ছে, এটা (করোনাভাইরাস) থেকেই যাবে। এটা মানবদেহে বেশ ভালো করেই বাসা বেঁধে নিতে পেরেছে। এটাই প্রথম ভাইরাস নয়, যেটা আমাদের সঙ্গে থেকে যাচ্ছে। ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটা ব্যতিক্রমও নয়।’
বিশ্ব পরিস্থিতি : বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে, গতকাল পর্যন্ত বিশ্বে ১০ কোটি ৯১ লাখ মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছে। এ সময়ে প্রাণহানির সংখ্যা ২৪ লাখ চার হাজার ছাড়িয়েছে। আর সেরে উঠেছেন আট কোটি ১৩ লাখ কভিড রোগী। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।