প্রাণের ৭১

একাত্তরের এই দিনে ৬ মার্চঃ মোহাম্মদ হাসান

উত্তাল ৬ মার্চ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) সভা-সমাবেশ-মিছিলে উত্তাল ছিল। ষষ্ঠদিনের মতো হরতাল পালনকালে ঢাকার সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আসে।

এদিন মহিলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে নারীরা বিশাল মিছিল বের করেন। অলি আহাদের নেতৃত্বে পল্টনে জনসভা এবং মোজাফফর আহমেদের সভাপতিত্বে গণসমাবেশ হয়। শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক, গণশিল্পীরা সভা-সমাবেশ ও মিছিলে শামিল হন। অসহযোগ চলতে থাকে পুরোদমে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তারই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতঃপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি- সেগুলো বেতন দেয়ার জন্য খোলা থাকে।

বেলা ১১টার দিকে সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যান। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুপুরে এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।

ভাষণে তিনি বলেন, ‘যা-ই ঘটুক না কেন, যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি, ততদিন আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের সংহতির নিশ্চয়তা বিধান করব।’

প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের পরেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ মিছিল হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার দল ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মোটামুটি একটি কাঠামো স্থির করতে চায়।

লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দোষারোপ করায় নূর খান দুঃখ প্রকাশ করেন।

পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

ইয়াহিয়া খানের ঘোষণাকে স্বাগত জানান পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ। এদিন ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের সব বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি জানান।
-সংগৃহীত।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*