একাত্তরের এই দিনে: উত্তাল ৮ মার্চঃ মোহাম্মদ হাসান
উনিশ শ’একাত্তর সালের এই মাসে তীব্র আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই।
আজ ৮ মার্চ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর দিনপঞ্জি থেকে জানাযায়,সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে সম্প্রচার কাজ শুরু হয়। প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও তা রিলে করা হয়।
ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি আ. স. ম. আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে “স্বাধীনতার আন্দোলন” ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষিত নির্দেশের ব্যাখা প্রদান করেন। এতে বলা হয়, ব্যাংকসমূহ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নগদ জমা, বেতন ও মজুরী প্রদান, এক হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান এবং আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স ও নগদ লেনদেন করতে পারবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খোলা থাকবে। সার সরবরাহ ও পাওয়ার পাম্পের ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক খোলা থাকবে।পানি ও গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ পৃথক আরেকটি বিবৃতিতে সামরিক শাসন কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত প্রেসনোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রেসনোটে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ।
নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে তা বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।
বৃটেনে প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ইসলামাবাদে পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দেয়া শর্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
উত্তাল মার্চের আজ ৮ম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশজুড়ে চলছিল মিছিল-মিটিং-বিক্ষোভ। সময় যত গড়াচ্ছিল মুক্তিকামী জনতার আন্দোলন ততই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিল। আন্দোলনে-মিছিলে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর গুলি সত্ত্বেও দমে যায়নি বীর বাঙালি।
সূত্রঃমুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।