প্রাণের ৭১

আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তি দুই যুগে পদার্পণ করল

মোহাম্মদ হাসানঃ আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তি দুই যুগ বা ২৪ বছরে পদার্পণ করল। দুই দশকব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার দেশের তিন পার্বত্যজেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জনপদে রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। এতে দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান হয়ে পাহাড়ে সূচিত হয়েছিলো শান্তির পথচলা।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে কয়েক দফা সংলাপের পর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী চুক্তি।

দীর্ঘ সময় ধরে এই সঙ্কটটি কখনই রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কখনও দমন নিপীড়ন এবং কখনও অগণতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সুদীর্ঘকাল বিরাজমান সঙ্কট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬ সালে প্রথম বারের মতো পার্বত্য জেলায় দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। তারই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি-বাঙালি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার স্বার্থে শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে আরও অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়।

বাংলাদেশে পার্বত্য চুক্তির ২৪ বছর পার হলেও তিন পার্বত্য জেলায় সংঘাত, অস্থিরতা বেড়েই চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ স্বীকার করেছেন।

এই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়েই বিতর্ক এখনও থামছে না। চুক্তি স্বাক্ষরকারী পাহাড়ীদের একটি সংগঠন জনসংহতি সমিতি অভিযোগ করছে, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিভিন্ন গোষ্ঠী নানান উদ্দেশ্য নিয়ে সক্রিয় থাকার সুযোগ পাচ্ছে এবং সেকারণে সেখানে অস্থিরতা বাড়ছে।

পার্বত্য অঞ্চলে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের অনেকে বলছেন, চাঁদাবাজি এবং অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই আঞ্চলিক দল এবং গোষ্ঠীগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছে এবং সংঘাত হচ্ছে।

এদিকে চুক্তির ২৪ বছরেও পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি পাহাড়ি জনপদে। পাহাড়ে এখনও গোলাগুলি, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এছাড়া পাহাড়ে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভেঙে এখন চারটি আঞ্চলিক দলে বিভক্ত। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। বেড়েছে রক্তের হোলি খেলা। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ২১ জন, ২০১৯ সালে ১৭ জন ও ২০২০ সালে নভেম্বর পর্যন্ত ২০ জন নারী-পুরুষ খুন হয়েছে, আহত হয়েছে ৫০ জনের মতো।

অভিযোগ রয়েছে, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে ঘিরে এসব খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*