নেতার গুলিতে কর্মী খুন, কারাগারে ইউপি চেয়ারম্যান
ইউপি নির্বাচনের দু’দিন আগে রাত ৯টা। অস্ত্র নড়াচড়া করতে গিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আবছার তিনটি ফাঁকা গুলি ছুড়েন। এ সময় একটি গুলি লেগে নিহত হন তার একনিষ্ঠ কর্মী নুরে এলাহী জুয়েল। এ ঘটনায় জুয়েলের মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা ৩নং মির্জাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৫ই মে বিকালে নির্বাচনী গণমিছিল ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা শেষে মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারহাট বাজারে নির্বাচনী অস্থায়ী প্রচারণা অফিসে সকলে জমায়েত হয়। রাত ৯টায় চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আবছার একটি অস্ত্র এনে নড়াচড়া করতে থাকে। এবং তিনটি ফাঁকা গুলি ছুড়েন।
একটি গুলি নুরে এলাহী জুয়েলের বুকে লেগে তিনি খুন হন। জুয়েল চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আবছারের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। পাশে থাকা একজন তাকে বলেন, আবছার ভাই, এটা কি করলেন? তখন আবছার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বিষয়টা বুঝতে পারি নাই। অস্ত্র চালানোর কোনো ধারণা আমার নাই। নড়াচড়া করা অবস্থায় হঠাৎ ফায়ার হয়ে যায়। কিছু হবে না, ঠিক হয়ে যাবে।’ পরে গুলিবিদ্ধ নুরে এলাহী জুয়েলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড কালাবাদশা পাড়া মৃত ডাক্তার শেখ আহম্মদের পুত্র। এ ঘটনায় জুয়েলের মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন দফায় হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ও পিবিআই নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। পরে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু আবছার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। আইনের খাতায় তিনি ছিলেন পলাতক। অথচ আবছার পুলিশের নাকের ডগায় প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াতেন। এদিকে করোনাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ইউপির সকল সদস্যগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অনাস্থা প্রস্তাব করেন। বিভিন্ন খাতের প্রকল্প আত্মসাতের সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন তারা। এবং করোনাকালীন সময়ে ত্রাণের চাল বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরে দীর্ঘ আঠারো মাস পর তাকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের আদেশ দেন আদালত। খুনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে স্বপদে বহাল হন ওই বিতর্কিত চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষে তার আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় চট্টগ্রাম জজ আদালতে আত্মসমর্পণ পূর্বক জামিনের আবেদন করেন। এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে সুষ্ঠু অভিযোগ এনে জামিনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। পরে আদালত মামলাটির নথিপত্র তীক্ষ্ণতার সহিত পর্যালোচনা করে নুরুল আবছারের জামিনের আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।