কিছু মানুষ দেশের উন্নয়ন ও অর্জনকে মেনে নিতে পারছে না বলে প্রধানমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ
বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন ও অর্জনকে দেশের কিছু মানুষ কেন মেনে নিতে পারছে না এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে কেন একদল মানুষ মনে কষ্ট পায়? কেন তারা কোন অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন বলে মেনে নিতে পারছে না?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এত বাধা, তবুও নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। তারপরও কিছু মানুষ এটিকে অর্জন হিসেবে নিতে পারে না।’
‘কেন তাদের এই দৈন্যতা?’ কোথায় তাদের সমস্যা? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তির ১৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে গণভবনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে প্রবৃদ্ধি যখন নেতিবাচক তখন আওয়ামী লীগের কারণে বাংলাদেশ মহামারীর সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের বেশি অর্জিত হয়েছে এবং তাঁর সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটও দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে সব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সর্বদাই তৎপর রয়েছে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে, যা প্রতিটি নেতাকর্মীর মনে রাখতে হবে এবং কোনো লোভের জন্য সেজন্য দেশকে কারো হাতে তাঁরা তুলে দিতে পারে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে সবসময় উজানে নাও ঠেলেই চলতে হয়েছে। জনগণই হলো আমাদের শক্তি। তাই কারও কাছে কোনদিন মাথা নত করিনি, জীবন ভিক্ষা চাইনি। আমি পরিবার থেকে, বাবার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে এটা শিখেছি যে, কারও কাছে বা কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না।
‘এক/এগারো’র-এর সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময়ে কারান্তরীণ সময়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতবার গ্রেফতার হয়েছি, ততবারই নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চিঠি দিয়েছি, চিঠির মাধ্যেমে নেতাকর্মীদের নিদের্শনা দিয়েছি, দেশবাসীকে চিঠি দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা সবসময় ঠিক থাকে- এটা বাবার সময়ও দেখেছি।
দলের দুঃসময়ে তৃণমূল নেতারা ঠিক থাকে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন ও চাপে বাধ্য হয় আমাকে মুক্তি দিতে। সে সময়ে মাত্র ১৫ দিনে তাঁর মুক্তির জন্য ২৫ লাখ সই সংগ্রহ করা হয়। যাতে সে সময়কার সরকারও অবাক হয়।
তিনি বলেন, এটাই আওয়ামী লীগ, জনগণই এর শক্তি। আর বিএনপির ক্ষেত্রে তাদের জন্মই হল আজন্ম পাপ। জনগণ বিএনপির শক্তি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। এ স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাবো। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে যাবো। যে যাই বলুক, আমরা আমাদের কাজ করে যাবো। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পর্যন্ত যেন সুফল পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ১০০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করেছি।
দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান শেখ হাসিনা। সেনাসমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক সময় কারাগারের অভ্যন্তরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দেয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির মুখে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে দিনটি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এর আগে আজ দুপুর পৌনে ১২টায় কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। প্রথমে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ এবং গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছে, যাতে এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি উন্নত সমৃদ্ধ জীবন পেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল নয়, তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না। যারা ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত এবং এর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে তাদের মুখে গণতন্ত্র, নির্বাচন এ সব কথা শুনতে ভালো লাগে না।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়েই কি বিএনপির জন্ম?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে স্থিতিশীল করেছে। যদিও বিএনপি হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও ‘বাংলা ভাই’ তৈরির চেষ্টা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জিয়া পরিবারের মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ উত্থাপন করে ২০০৭ সালে ‘আর রাজনীতি করবোনা’ বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করা তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান করে সেখানে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং বিলাসবহুল জীবন যাপন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে সেই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু, তাদের (বিএনপি) ভালো লাগছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শুধুমাত্র একবারের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রত্যক্ষ করেছিল এবং সেটা ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ করেছিল। সেজন্য দেশের জনগণ, প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী তথা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিশাল মূল্য দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট পরপর পাঁচবার দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিল।
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগারের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, কখনো ক্ষমতায় গেলে কীভাবে দেশ পরিচালিত হবে, দল কীভাবে পরিচালিত হবে, তা তিনি তখনই লিখে রাখেন এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নকারি টিম তাঁর কথাতে সেটিকে আরো সময়োপযোগী করেছে। যার ফলে এখন প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছে তাঁর সরকার।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার পরিকল্পিত ভাবে অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে উন্নয়নে সামঞ্জস্য রক্ষা করার মাধ্যমেই আগামীতে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, কারাগারে বন্দিদশায় সময় পেয়ে এই লাভটা অন্তত হয়েছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কিভাবে গড়ে তুলতে চান তার একটি কাঠামো সে সময়েই প্রস্তুত হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। তিনি বলেন, আমরা জানি কিভাবে মানুষের কল্যাণ করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রবল আন্তর্জাতিক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। আজ এই পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়ে যারা কথা বলে তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করাই যার মূল লক্ষ্য। যদিও তাঁর সরকার বিশ^ মন্দার মাঝেও দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। যা অনেক উন্নত দেশও করতে পারছে না।
দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে গণমানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন এবং যেটি বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও উন্নয়ন সহযোগীদের চাইতে তিনি ভালই বোঝেন বলেও উল্লেখ করেন।bss