ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ৯ জনের প্রাণ নিয়ে ভোলার উপর দিয়ে চলে যায়
মোহাম্মদ হাসানঃ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর অগ্রভাগ সোমবার সন্ধা ছয়টায় ও মূল কেন্দ্র রাত নয়টায় উপকূলে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ভোলার ওপর দিয়ে বৃষ্টি ঝড়িয়ে দূর্বল হয়ে চলে যায়।
ঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হয়। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ–নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা নিয়ে আছড়ে পড়ে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দমকা বাতাসে সোমবার কুমিল্লায় ৩জন, ভোলায় ২জন, সিরাজগঞ্জে দুজন, নড়াইল ও বরগুনায় ১জন করে মোট ৯জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতির কারণে মঙ্গলবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বাতাসের গতিবেগ ছিল সবচেয়ে বেশি—ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। এ ছাড়া বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে নদ–নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়ে। তবে বাতাসের গতিবেগ কম থাকায় জলোচ্ছ্বাসের গতিবেগও ছিল কম।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। এর ফলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে থাকতে দেখা যায়। চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও খুলনার প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে বলে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এর ফলে এসব এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ব্যতিক্রমী আচরণ করেছে। প্রথমত, বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ের মূল মৌসুম হিসেবে এপ্রিল-মে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসকে ধরে নেওয়া হয়। এ সময়ে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আর বায়ুপ্রবাহের ধরনের কারণে এ চার মাসে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ এবং তা থেকে ঘূর্ণিঝড় বেশি তৈরি হয়। দেশে অক্টোবর মাসে সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মতো অনুকূল আবহাওয়া তেমন থাকে না।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতেই বঙ্গোপসাগর স্বাভাবিকের বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ এবং এর একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে হলোও তাই। ফলে চলতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ, ওই সময় ১০ বছর ধরে প্রায় প্রতিবছরই বঙ্গোপসাগরে কমপক্ষে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ঝড়ের আরেকটি ব্যতিক্রমী আচরণ ছিল এর আঘাতের এলাকা নিয়ে। ১৯৮০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূলে যে কটি বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে, তার মধ্যে মাত্র দুটি ঝড়ের কেন্দ্রস্থল ছিল বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চল। একটি ১৯৮৫ সালে ও আরেকটি ১৯৯১ সালে। ওই দুটি ঝড়ে বাতাসের গতির চেয়ে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছিল। এবারও বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে।