মীরসরাইয়ে বিএনপি’র রোড মার্চ আ’লীগ’র শান্তি সমাবেশ
মোহাম্মদ হাসানঃ বর্তমান দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় চলমান কর্মসূচির ঢেউ এখন চট্টগ্রামের প্রবেশপথ মীরসরাইয়ে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির রোড মার্চ পৌঁছবে মীরসরাইয়ে। সেখানে তারা একটি পথসভা করবে।
এদিকে আজ বুধবার সন্ধ্যায় এখানকার ১৮টি ইউনিটে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ ছাড়া শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় শান্তি সমাবেশ করবে দলটি। যেখানে উভয় দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে এসব কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানায় বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে।
যাতে আসামি করা হয়েছে শতাধিক বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীকে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের কেন্দ্র ঘোষিত রোড মার্চ কর্মসূচিতে নির্বিঘ্নে সমবেত হতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, রোড মার্চ কিংবা সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত করতে দেওয়া হবে না। দুই দলকে আলাদা দুইটি স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মীরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশ অনুযায়ী তারা নিজেদের শান্তি সমাবেশ জাঁকজমকপূর্ণ করতে এবং বিশাল সমাগম ঘটাতে কাজ করছে। এতে বিএনপির রোড মার্চ কর্মসূচিতে কোনো প্রভাব পড়বে বলে তাদের মনে হয় না।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে পূর্বঘোষিত। সেখানে আওয়ামী লীগ এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে আগের দিন একযোগে ১৮টি ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল দিয়েছে। বিষয়টি আমরা পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি দলকে জানিয়েছি, তারা যেন আগের দিনের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
এ সময় বিএনপির স্থানীয় এ শীর্ষ নেতা দাবি করেন, ‘দলের রোড মার্চ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মীরসরাই সদরে বিএনপি একটি পথসভা করবে। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাষণ দেবেন। এ পথসভায় অন্তত ৪০-৫০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে।’
বিএনপির কর্মসূচির আগের দিন একযোগে ১৮টি ইউনিটে ক্ষমতাসীন দলের বিক্ষোভ মিছিল বিএনপি নেতাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির ওই নেতার এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেন মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মীরসরাই শান্তির জনপদ। এখানে দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে দলের শান্তি সমাবেশ সফল ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে এবং বিশাল জনসমাগম ঘটাতে হবে। এই প্রচারের অংশ হিসেবে বুধবার সকাল থেকে ট্রাকযোগে রোড শো এবং ওই দিন সন্ধ্যার পর বিএনপি কর্তৃক হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে উপজেলার ১৮টি ইউনিটে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল আহ্বান করা হয়েছে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের এ নেতা দাবি করেন, ‘শুক্রবারের শান্তি সমাবেশ পরিণত হবে জনসমুদ্রে। বিএনপি এখন ভাঙা কলসি, বাজাতে চাইলেও আর বাজবে না।’
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে তৈরি রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করছে পুলিশ। এমন দাবি করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মীরসরাই সার্কেল) মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘রোড মার্চ কিংবা সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত করতে দেওয়া হবে না। দুই দলকে আলাদা দুইটি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।’
মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় মীরসরাই সদরে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখবেন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারসহ জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া জানান, শুক্রবার দুপুর ২টায় বারইয়ারহাট হাইওয়ে চত্বরে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাসহ জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা।