বিদেশি ষড়যন্ত্রে ম্যাটিকুলাস পরিকল্পনায় যেভাবে আওয়ামীলীগের পতন হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা, সাইবার সিকিরিউটি বিশেষজ্ঞ মাইক বেঞ্জ এবং মার্কিন রক্ষণশীল রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক টাকার কার্লসনের পডকাস্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে – ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সরকার পতনে বাইডেন প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়। এক্ষেত্রে – বাইডেন প্রশাসন CIA (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) এর প্রক্সি সংগঠন USAID, IRI, ও NED দ্বারা বাংলাদেশে বিশাল পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে। অর্থায়ন করা হয় মিডিয়া, সাংস্কৃতিক কর্মী, র্যাপার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার, রেড়িক্যাল গ্রুপ, জঙ্গি সংগঠন, সন্ত্রাসীগ্রুপ, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপর। বলে রাখা ভালো যে – মাইক বেঞ্জ এবং টাকার কার্লসনের আলোচনাটি ইতিমধ্যে ইলোন মাস্ক তাঁর এক্স একাউন্টে শেয়ার করেছেন। টাকার কার্লসন একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক ও ডোনাল ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিও বটে। কথার কথা যদিওবা বলি যে – ইলোন মাস্ক ও মি. কার্লসন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বসে বাইডেন প্রশাসনের দুর্নামে পডকাস্টটি আয়োজন করে ছড়িয়েছেন। সেক্ষেত্রে আচ্ছা চলুন দেখি – মি. মাইক বেঞ্জ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে অভিযোগগুলো করেছেন, আসলেই কি IRI, NED, USAID বাংলাদেশে অর্থায়ন করেছিল কি-না তাতে? যাদের উপরে অর্থায়ন করার কথা বলেছে, তাদের কোনপ্রকার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় কি-না?
বাংলাদেশের সরকার পতনের বিষয়ে পডকাষ্টঃ https://x.com/TuckerCarlson/status/1888054969145651464
ইলোন মাস্কের ‘মাইক বেঞ্জ’ এর বাংলাদেশ বিষয়ক টুইটঃ
https://x.com/elonmusk/status/1887036439289897208
মাইক বেঞ্জের মতে – USAID বাংলাদেশের সরকার পতনে অর্থায়ন করে ২০১৮ সালের সময় থেকে। এক্ষেত্রে আমরা যদি বাংলাদেশে USAID এর কার্যক্রম দেখি তবে লক্ষ্যণীয় যে – বাংলাদেশের বৃহত্তর এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্রাক এর সঙ্গে USAID ‘বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী’ প্রকল্প ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে। এতে ৫ বছরে ৪৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ব্রাকের নাম কেনো আনলাম সেটিও বলছি!
ব্রাক ও USAID এর ‘বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী’ প্রকল্পঃ
https://www.jugantor.com/tp-second-edition/775010
মাইক বেঞ্জ বললেন – ট্রান্সজেন্ডার, হিজড়া ও সমকামী সম্প্রদায়ের উপর IRI, USAID অর্থায়ন করে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে আমরা যদি লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাই – ২০২৪ সালের ১৯’শে জানুয়ারি ‘জাতীয় সেমিনার ২০২৪’ নামক অনুষ্ঠানে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব সমকামীতা এবং ট্রান্সজেন্ডার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ৭ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের এক অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক একটি গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোটা দেশের মানুষ দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। একপক্ষ আসিফ মাহতাব এবং অন্যপক্ষ সমকামী/ট্রান্সজেন্ডাদের অধিকারের পক্ষপাত হয়ে পড়ে। দেশজুড়ে হইচই রব উঠলে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় আসিফ মাহতাবকে চাকুরীচ্যুত করেন। আরো ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যে – এই ঘটনায় বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কম্যুনিটির সদস্যরা দাবী করেছিলেন – ‘তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আসিফ মাহতাবের বক্তব্য মানুষের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দিবে’।
আসিফ মাহতাবের সমকামীতা এবং ট্রান্সজেন্ডার বিতর্কঃ
https://www.bbc.com/bengali/articles/c51ejgq45xlo
আপনার মনে হতে পারে – শিক্ষক আসিফ মাহতাব, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রান্সজেন্ডার কম্যুনিটি, শিক্ষার্থী এরা সবাই আলাদা আলাদা, কিন্তু নাহ।এনারা সবাই USAID, IRI দ্বারা অর্থায়নকৃত সদস্য, কিন্তু একই নাটকে অভিনয় করেছেন ভিন্ন রোল-এ! একদল সরকারের পক্ষে থেকে, অন্যদল সরকারের বিরোধিতা করে মানুষকে উত্তেজিত করেছিল! আরো গভীরে যেতে হবে।
২০২৩ সালের ২৬’শে নভেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভাল’ অনুষ্ঠানে হো-চি-মিন ইসলাম নামে এক ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যোগ দিতে না দেওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হো-চি-মিন ইসলাম ছাড়াও পোগ্রামে ছিলেন ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড উইমেন অন্ট্রপ্রোনারশিপ ইউনিটের সিনিয়র ম্যানেজার কাশফি বিনতে আহমেদ এবং আজিমুর রোকিয়া রহমান, ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন, চিরকুট ব্যান্ডের সুমী। নামগুলো খুব পরিচিত না? আসছি সেই প্রসঙ্গে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো-চি-মিনকে ঘিরে বিতর্কঃ
https://www.bbc.com/bengali/articles/cmlpx1y02v4o
একই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১০’শে আগস্ট গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হো-চি-মিন ইসলাম। সাক্ষাতের পর তার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বলেন – ‘ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্যে আজকের দিনটি মাইলফলক’! বেশ দম্ভের সঙ্গেই বলেন – ‘অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই’! এই যে ব্যাপারগুলো, এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো-চি-মিনকে ঘিরে বেশ তুলকালাম কান্ড, এগুলোর মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রতি জনমনে একরকম ধর্মীয় বিদ্বেষের ভাবধারা সৃষ্টি করা হয়েছে মাত্র৷ অর্থাৎ মেসেজটা এই যে- আঃলীগ সরকারের সরাসরি সমর্থনেই ধর্মীয় মূল্যবোধের এদেশে ট্রান্সজেন্ডার/LGBTQ ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে আরো একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নিয়ে বেশ হইচই হয় (২০২১) – তাসনুভা আনান (শিশির)। বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী উপস্থাপিকা হিসেবে বাংলাভিশনে যাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। মজার বিষয় – তারা দুইজনই ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কম্যুনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করেন। আরো মজার বিষয় – জুলাই অভ্যুত্থানে একদম সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেলেন হিজড়া সম্প্রদায়, ছিল ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সমর্থন। আরো মজার বিষয় যে – ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের বিপ্লবীগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ আরামে জীবনযাপন করছেন। বলে রাখা ভালো – IRI এর অর্থায়নে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের নাচ, শর্টফ্লীমসহ নানা কর্মসূচী ২০১৮-২০২৪ এই সময়টাতে অনুষ্ঠিত হয়। বিহারী (মাইনরগ্রুপ), LGBTQ কম্যুনিটি থেকে ৭৭ জন এক্টিভিস্ট এবং ৩২৬ নাগরিক নিয়ে তারা আলাদা টিম গঠন করে বছরব্যাপী কার্যক্রম চালায়। এদিকে ২০২০ সালে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডাদের ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের জন্য ২.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন। জানাজানি হলে ২০২৪ সালের শুরুতে মার্কিনীদের মধ্যে যা বেশ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যেটা বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়াগুলো, সাংবাদিকেরাও কৌশলেই চেপে যায়।
হো-চি-মিন ইসলামের পাশে শেখ হাসিনাঃ
https://www.prothomalo.com/bangladesh/jretv8gk5i
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে নাচের অনুষ্ঠানঃ
https://www.risingbd.com/entertainment/news/384031
বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার, LGBTQ সম্প্রদায়কে অর্থায়ন করায় রন ডেসান্টিস (রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতির প্রার্থী এবং ফ্লোরিডা গভর্নর) ক্ষোভঃ
https://edition.cnn.com/2024/01/12/politics/fact-check-ron-desantis-aid-to-bangladesh/index.html
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় তৃতীয় লিঙের মানুষঃ
মজার বিষয় যে – শরীফ ও শরীফা গল্প নিয়ে যেই হইচই আন্দোলন হয়েছিল, সপ্তম শ্রেণির বইয়ে এই অধ্যায়টি দিয়েছিল ‘Bandhu Social Welfare Society’ নামক একটি সংগঠন। যারা IRI এর সরাসরি ফান্ডিংয়ে খুলনা, কক্সবাজারে এবং ঢাকা শহরে ট্রান্সজেন্ডারের ড্যান্সিং পোগ্রাম আয়োজন করেছে। যা গ্রে-জোনের রিপোর্টে উঠে এসেছে। শরীফ ও শরীফা গল্প ভাইরাল হবার সময়েই আসিফ মাহতাবসহ অনেকেই এই সংগঠন ঘেরাও করে আন্দোলনও করেছিল।
ম্যাক্স ব্লুমেলথালের নিউজ আউটলেট গ্রে-জোনের রিপোর্টঃ
Leaked files expose covert US government plot to ‘destabilize Bangladesh’s politics’
মাইক বেঞ্জের ভাষ্যে – জুলাই আন্দোলনে ব্যবহার করা হয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের। কারা এই সাংস্কৃতিক কর্মী? লক্ষ্য করলেই দেখবেন – আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আজমেরী হক বাঁধনসহ আরো অনেকেই। বাঁধনের কথা উল্লেখ করলাম, কারণ – আপনাদের হয়তোবা মনে আছে ‘রেহেনা এবং খুফিয়া’ দুটি সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র ইসলামিস্টদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে – খুফিয়া সিনেমায় সমকামিতা নিয়ে হইচই হলে বাঁধনের পক্ষে এসে দাঁড়ায় ধর্মনিরপেক্ষ এবং আঃলীগপন্থি নেতাকর্মীরাই। আরো গভীরভাবে বলি – বাঁধনকে কখনো আঃলীগ নেত্রী সাবেক মন্ত্রী ডা.দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তারানা হালিমের সঙ্গে প্রায়শই দেখা গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আঃলীগের পক্ষে এবং ২০২০ সালের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আঃলীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলামের প্রচারণায় অংশ নেন বাঁধন। এই যে ব্যাপারগুলো – এসবের মাধ্যমে বাঁধন একদিকে নিজেকে আওয়ামীপন্থী হিসেবে জাহির করতে পেরেছেন, অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে একাট্টাভাবে যোগ দিয়ে একটা মেসেজও দিয়েছেন – ‘আওয়ামীলীগ সমর্থক হলেও, আওয়ামীলীগকের অন্যায়ে তিনি চুপ করে থাকতে পারেন না’! জনগণ বুঝেছে – ‘আরে আঃলীগের সমর্থকই যখন আঃলীগের বিরুদ্ধে তখন আঃলীগ নিশ্চয়ই মস্তবড় কোন অন্যায়ই করেছে! আর তো ঘরে থাকা যায় না’! বলে রাখা ভালো যে – শেখ হাসিনার পতনের ৪০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে বাঁধনেরা গরু জবাই দিয়েছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাষ্কর্য ভাঙার পর তার জবাব ছিল এমন – ‘বঙ্গবন্ধুর অপমানে তাঁর দুই সন্তানই দায়ী’!
আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধনঃ
খুফিয়া সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্কঃ
জুলাই আন্দোলনে অভিনেত্রী বাঁধনঃ https://youtu.be/gidRGVnKPqM?si=rFOdIjVNhHAumtZq
সরকার পতনের ৪০ দিন পূর্তিতে বাঁধনের গরু জবাইঃ
মাইক বেঞ্জ বললেন – জুলাই অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ সংগঠন, যেগুলোকে মার্কিন সরকার ধ্বংস করতে চায় এমন জঙ্গি সংগঠনের উপর অর্থায়ন করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে কি এমন কোন নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল? হ্যাঁ – বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর অনলাইনের মূল সমন্বয়ক (নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী) ইমতিয়াজ সেলিম প্রকাশ্য দাবী করে বলেন- ‘ইনক্লুডিং জেন-জি হিযবুত তাহ্রীর একটা ইন্টেলেকচুয়্যাল এবং পলিটিক্যাল লিডিং ফোর্স। ডেফিনিটলি আমরা মাঠে ছিলাম। কিন্তু এই আন্দোলনটা কোনোভাবেই যাতে কালার না হয় এবং কোনোভাবে যাতে এটাকে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে আমরা খুবই সতর্কতার সাথে উইদাউট আওয়ার ব্যানার, আমরা মাঠে ছিলাম’। ইমতিয়াজ সেলিমের বক্তব্যে উঠে আসে তিনটি প্রধান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম – নর্থ সাউথ, ব্রাক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
ইমতিয়াজ সেলিমের প্রকাশ্য দাবীঃ
মাইক বেঞ্জ বললেন – জুলাই অভ্যুত্থানে অর্থায়ন করা হয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর। জুলাই আন্দোলনের সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি করলে হঠাৎ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন চালিয়ে নেয়। ৫’ই আগষ্টের পর খোদ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক ইন্টারভিউতে তারা দাবী করেন – ‘যেকোন মূল্যেই শেখ হাসিনাকে উৎখাত করাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য’। এদিকে – প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর সরকার অ্যাকশন নিলে, তাতে প্রতিবাদ জানিয়ে ঐ আন্দোলনে সংহতি জানায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২৬ জন শিক্ষক।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবীঃ
আন্দোলনে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৬ শিক্ষকের সংহতিঃ
https://www.dhakapost.com/national/296288
মাইক বেঞ্জ বললেন – শেখ হাসিনার পতনে র্যাপার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের উপরেও অর্থায়ন করা হয়। এমন কোন র্যাপার বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার কি আছে? জ্বী আছে। র্যাপ সংগীত তরুণ-যুবকদেরকে আন্দোলনে বেশ ক্ষেপিয়ে দিয়েছিল। র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’, সেজানের ‘কথা ক’, তৌফিকের ‘এ দায় কার’, এই র্যাপ গানগুলো পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে অর্থায়ন থেকে শুরু করে লিরিক্স সাজানো, সবকিছু হয়েছিল USAID, IRI নির্দেশেই। মাইক বেঞ্জ ইতিমধ্যেই তাঁর এক্স একাউন্টে তৌফিকের ঐ গানটি শেয়ার দিয়ে পরিকল্পনার কথা বলেছেন। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে সবার আগে আন্দোলনে যোগ দিয়ে সামনের সারিতে ছিল সালমান মুক্তাদির। বলে রাখা ভালো যে – সালমান মুক্তাদির তার ‘অভদ্র প্রেম’ মিউজিক ভিডিওর দায়ে দেশে বেশ বিতর্কিত হয়েছিলেন। এমন ব্যক্তিবর্গই যখন আন্দোলনে সামনে এসেছিল, তখন তরুণদের মধ্যে একটা তাড়না লক্ষ্য করা গেছে – ‘এতদিন যাকে খারাপ বলেছি আমরা, আজ সে-ও দেখি আমাদের পক্ষে। আর তো ঘরে বসে থাকা যায় না’!
যেভাবে তৈরি হয় ‘আওয়াজ উড়া, কথা ক’ – হান্নান এবং সেজানের স্বীকারোক্তিঃ
মাইক বেঞ্জ আরো বললেন – জুলাই আন্দোলনে শীর্ষ সব সন্ত্রাসীদেরকেও ব্যবহার করা হয়েছে। আসলেই কি এমন ঘটেছে। হ্যাঁ – ৫’ই আগষ্টের পর ডক্টর ইউনুস সরকার দেশের পরিচিত শীর্ষ সকল সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দিয়েছে।
দেশের পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তিঃ
মাইক বেঞ্জের পডকাস্টে আরো একটা বিষয় উঠে আসে, IRI ২০১৯/২০ সালের দিকে একটি রিপোর্ট সাবমিট করে যেখানে তারা বিএনপিকে সমর্থনের কথা উল্লেখ করে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে বলে। যদিও বিএনপি জনগণকে মবিলাইজ (সংগঠিত করতে) ব্যর্থ হয় এবং ২০১৮ নির্বাচনে পরাজিত হয়। কেননা – দেশের নানান জায়গায় এক্ষেত্রে দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়। ব্যাপারটি অর্থায়ন করা পক্ষদের পাশাপাশি হিলারি ক্লিন্টন পক্ষকে (বাইডেন প্রশাসনের দলীয়পন্থী তথা ডেমোক্রেটিক) নিসন্দেহেই আরো ক্ষুব্ধ করে তুলে। এ পডকাস্টে মাইক বেঞ্জ আরো বলেন – জুলাই আন্দোলনে দুটি নতুন এক্টিভ স্টুডেন্টস্ গ্রুপকেও সম্পৃক্ত করা হয়। এদের একটির নাম বেশ পরিচিত, সেটি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দল ‘নাগরিক ছাত্র শক্তি’, যা ৪’ই অক্টোবর ২০২৩’য়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। মজার বিষয় যে, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের এই তথ্যটি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাও জানতো। ফলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের ১৫’ই ডিসেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বিশেষ সতর্কবার্তায় বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশে একটি আরব বসন্ত ঘটাবে CIA’। একই সতর্কবার্তা সহিত নিউজ করে চায়নার গণমাধ্যম। জাপানিজ গণমাধ্যম ২৯’ই জুলাই একইরকম সম্ভাব্যতা নিয়ে নিউজ করে। যাইহোক, ঐ পডকাস্টে আরো একটা বিষয় উঠে আসে – বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মিলিটারি বেইজ’ করতে দেননি। ফলে ২০১৮ সাল থেকে আমেরিকা USAID, IRI, NDI এরমতো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা বাংলাদেশকে পলিটিক্যালি ডিস্টাবল করার প্রচেষ্টা শুরু করে।
ছাত্রদের নতুন সংগঠন ও মারিয়া জাখারোভার সতর্কতা বিষয়ে আরো বিস্তারিতঃ
https://www.facebook.com/share/p/19rCnWws6R/
মাইক বেঞ্জের তথ্যমতে – ২০২১ সালে ডিসইনফরমেশন প্রতিরোধে মোঃ তৌহিদ হোসেন’সহ আরো কয়েকজনকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, USAID মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে ফরমাল ট্রেনিং দেয়। বলে রাখা ভালো – মোঃ তৌহিদ হোসেন ড. ইউনুস সরকারের বর্তমান ফরেন এডভাইজার হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এদিকে – দেশে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্রতর হলেও, নির্দিষ্ট একটা পক্ষকে টার্গেট করে মামলা হামলার মতো খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলেও ইন্টেরিম সরকার মিডিয়াকে সেসব এড়িয়ে যেতে বরং চাপ ক্রিয়েট করে চলেছেন। যা ইতিমধ্যেই অনেক সাংবাদিকও স্বীকার করেছেন।
USAID দ্বারা ডিসইনফরমেশন প্রতিরোধে ট্রেনিংঃ
https://bd.usembassy.gov/usaid-workshop-trains-reporters-on-countering-misinformation/
প্রসঙ্গত যে – ২০২৪ সালের ২৭-২৮’শে জুন ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ইউনুস সেন্টারের উদ্যোগে ‘Social Business Day’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ড. ইউনুস, আসিফ নজরুল, শহিদুল আলম, লামিয়া মোর্শেদ, ফরিদা আখতার, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি আব্দুল হান্নান প্রমুখ। এই সম্মলেনটি আন্দোলন তরান্বিত হবার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই অনুষ্ঠিত হয়। মজার বিষয় কি জানেন? এই সম্মেলনের আয়োজক ফিলিপাইনের NWTF নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান, যারা ফিলিপাইনে USAID এর মূল পার্টনার। ইউনুস সেন্টারের সাথে NWTF মিলে এই Social Business Day আয়োজন করেছিলেন। যারা বিভিন্ন সময়ে USAID থেকে ফান্ডিংও পেয়ে থাকেন। ডক্টর ইউনুস ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা; আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা; ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা; লামিয়া মোর্শেদ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী, আব্দুল হান্নান বর্তমানে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তা আরো খুলে বলার নিশ্চয়ই প্রয়োজন নেই?!
ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ড. ইউনুস সেন্টারের সম্মেলনঃ
https://socialbusinesspedia.com/events/sbd2024/
ইউনুস সেন্টার ও NWTF সমন্বয়ে সম্মেলনঃ https://visayandailystar.com/fisherfolks-receive-financing-from-usaid-nwtf/
যাইহোক। আমরা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কিংবা নির্যাতিত মানুষদের নিয়ে কতই না হাহুতাশ করি, তাদের অধিকার নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করছি। কিন্তু, আমরা জানতেও পারি না যে, যারা ক্যামেরার সামনে নির্যাতিত হচ্ছেন কিংবা আহাজারি করছেন তারা কোন না কোনভাবে আমাদের ইমোশনকে নিয়ে খেলছেন তো বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেই ইমোশনকে পুঁজি করেই তারা কোটি কোটি টাকা হাতাচ্ছে, উন্নত রাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ পাচ্ছে। আমরা পিছিয়ে পড়া বিতর্কিত মানুষেদের অধিকার নিয়ে লড়ছি, জীবনের ঝুঁকিতে পড়ছি, অথচ আমরা জানিও না তারা পুরো একটা দেশকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। ব্যাপারটা এমন যে- আপনি একটা ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ, আপনাকে মেরে ফেলতে প্ল্যান করেছে আপনার পরিচিতজনেরাই। যাদের কেউ কেউ উপরে একই মতাদর্শে একাট্টা, আবার কেউ বিপরীতমূখি। কিন্তু, আপনাকে হত্যার পরিকল্পনায় তারা সবাই এক। প্ল্যান মেতাবেক আপনাকে তারা দাওয়াত দিয়ে একই পাতিলের খাবার খাওয়াচ্ছে, আপনি তাদের সঙ্গে হাসছেন, গাইছেন, গল্পগুজব করছেন। অথচ আপনি ঘুণাক্ষরেও জানেন না- ‘আপনার সঙ্গে থাকা লোকগুলোই আপনাকে শীঘ্রই হত্যা করতে চলেছে’। রাজনীতিতে এই ব্যাপারটা আরো জঘন্যতর। এরজন্যেই হয়তো বলা হয় – ‘রাজনীতি এবং প্রস্টিটিউশন বিশ্বের অন্যতম দুটি প্রাচীন পেশা। যেখানে স্বার্থের দৃষ্টিকোণে সবাই হাত ধরাধরি করে চলে’!
– গভীর পরিকল্পনায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার বড়সড় সব মাছেদের উপর অভিযোগ করে নজর রাখলেও, একঝাঁক ছোট মাছ এসে শেখ হাসিনা সরকারের গদি খেয়ে ফেলেছে। সেই ছোট মাছের ঝাঁকের মধ্যেই শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করা মাছেদের সংখ্যাই আবার অনেক বেশি।