করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক দেশগুলোর সম্মিলিত তহবিল গঠনের প্রস্তাব মোদীর
ভারেতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আঞ্চলিকভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একটি সম্মিলিত জরুরি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি এই তহবিলে সীড মানি হিসেবে দিল্লীর পক্ষ থেকে এক কোটি ডলার প্রদানেরও প্রস্তাব করেন।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘আমি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করছি। আমাদের সবার স্বেচ্ছা-সহায়তার ভিত্তিতে এই তহবিল গঠন করা যেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জরুরি এই তহবিল প্রাথমিকভাবে ভারত এক কোটি ডলার দিয়ে শুরু করতে পারে।’ এই তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলেও মোদী তার প্রস্তাবে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বিকেলে সার্কভুক্ত সদস্য দেশগুলোর অংশগ্রহণে করেনা ভাইরাস মোকাবেলায় সম্মিলিত কর্মকৌশল নির্ধারণে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে ভাষণে একথা বলেন।
কোভিড-১৯ রোগ বৈশ্বিক মহামারী রূপ ধারণ করার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে সার্কভুক্ত আটটি দেশের নেতৃবৃন্দ এই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।
মোদী বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে আমাদের এক সাথে কাজ করতে হবে। আমরা বিচ্ছিন্ন না থেকে একত্রিত হওয়ার মধ্যদিয়ে এর সবচেয়ে বড় জবাব দিতে পারি। অংশীদারিত্ব কিন্তু সন্দেহ নয়, প্রস্তুতি কিন্তু আতংক নয়।’
তিনি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে মহামারীজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে গবেষণার সমন্বয় সাধনের জন্য একটি সাধারণ গবেষণা প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের একটি সাধারণ গবেষণা প্ল্যাটফর্মও গঠন করার বিষয়ে ভাবা উচিত। এ ধরনের কাজের সমন্বয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ সহায়তা করতে পারে।’
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় জন্য সার্ক দেশগুলোর সম্মিলিত আঞ্চলিক প্রচেষ্টার পক্ষে মোদী অভিমত প্রদান করে বলেন, ‘আমাদের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক প্রাচীন এবং আমাদের সমাজ গভীরভাবে জড়িত। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই একত্রে প্রস্তুতি নিতে হবে, আমাদের অবশ্যই একত্রে কাজ করতে হবে এবং সফল হতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক-পঞ্চমাংশ জনগণের বসবাস এবং এটা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোর প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক প্রাচীন এবং আমাদের সমাজগুলো গভীরভাবে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত।’
প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়ানোর বিরুদ্ধে ভারত আধুনিক প্রক্রিয়াসহ সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বিধি-নিষেধ বাড়িয়েছি। আমরা টিভি, প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের জনসচেতনতামূলক প্রচারকে বাড়িয়েছি, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মোদী আরও বলেন, তাঁরা সারাদেশে তাদের চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় প্রক্রিয়ায় দ্রুত দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন।
তিনি বলেন, ‘টেস্টিং কিট এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ আমরা ভারতে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের একটি র্যাপিড রেসপন্স টিম (আরআরটি) সংযোজন করছি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী সার্ক দেশগুলোকে আশ্বস্ত করেন যে, চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত আরআরটি স্থিতিশীল থাকবে, প্রয়োজনে তাদের (সার্কভুক্ত দেশ) নিষ্পত্তিতেও কাজে লাগানো যাবে। ‘তারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন, আপনাদের প্রয়োজন হলে ভারত থেকে তাদের পাঠানো হবে’।
তিনি বলেন, তারা সম্ভাব্য ভাইরাস বহনকারী এবং যাদের সাথে তারা যোগাযোগ করেছেন তাদের আরও ভালভাবে সনাক্ত করার জন্য একটি সমন্বিত রোগ নজরদারি পোর্টাল স্থাপন করেছেন।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের প্রোটোকল তৈরি করেছি। বিদেশে মোবাইল টিম মোতায়েন করে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। আমরা জানি যে অন্যান্য দেশগুলিও তাদের ভারতে থাকা নাগরিকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। সুতরাং আমরা যে পদক্ষেপ নিচ্ছি সে সম্পর্কে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করছি’।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আয়োজিত এই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং পাকিস্তানের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাফর মির্জা।