প্রাণের ৭১

স্থানীয় নেতার নির্দেশঃ নির্জন পুকুরের ঝুপড়ি ঘরে স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিনে

ঢাকার একটি হাসপাতালের এক নারীস্বাস্থ্যকর্মী (২১) গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টিনে রেখেছেন এলাকাবাসী।

 

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে অবস্থান করছেন।

 

ঘটনাটি ঘটেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলায় আলোচনার ঝড় ওঠে।

 

জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন ওই স্বাস্থ্যকর্মী। করোনা ভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈ এর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।

ভুক্তভোগী ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না।

 

কান্নাজনিত কন্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে সংসার চলে। আমার মেয়েটার এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে।

 

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম। অপরদিকে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য জানান, ওই স্বাস্থ্যকর্মী এলাকায় আসার পর পরিবার থেকে আমাকে জানানো হয়। আমি তাকে আলাদা ঘরে কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা বলেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাকে নির্জন ফাঁকা জায়গায় ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে রেখেছে আমার জানা ছিলো না। বিষয়টি আজ জানতে পেরে তাকে ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, বিষয়টি জানার পর ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে তার ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওই বাড়িতে ৪০টি পরিবার আছে। এটি তাদের বিষয়। তবে যেহেতু আমি রাজনীতি করি তাই আমার শক্রু থাকতে পারে। তারাই হয়তো শক্রুতা করে আমার নাম বলেছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*