মুক্তিপণের টাকা হাজী কামালকে দিয়েছিলেন লিবিয়ায় নিহতদের স্বজনরা
গত ২৮ মে পাচারকালে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে নৃশংসভাবে গুলি করে ২৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় আরও ১১ বাংলাদেশি আহত হয়। এ মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা হাজী কামাল। লিবিয়ায় নিহত ও আহতদের বেশিরভাগকে হাজী কামালই পাঠিয়েছেন। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর নির্যাতন করে পাচারকারী চক্র পরিবারের কাছ থেকে যে মুক্তিপণের অর্থ আদায় করেছিল, তার সব টাকাই গেছে হাজী কামালের মাধ্যমে।
সোমবার (১ জুন) দুপুর ২টায় রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ডের পর নিহত ও আহতদের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, সবাই হাজী কামালকে মুক্তিপণের টাকা দিয়েছে। এরপরও কেউ সন্তানদের ফেরত পাননি। হাজী কামালকে গ্রেফতারের সময় পাওয়া ডায়েরিতেও টাকা নেয়ার তথ্য রয়েছে। কামাল নিজেও স্বীকার করেছেন টাকা নেয়ার কথা। আর কামাল এসব টাকার একটি অংশ বিদেশে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাত।’
র্যাব-৩ এর সিও বলেন, ‘কামালের কাছে পাওয়া ডায়েরিতে অন্তত ৪০০ ভিকটিম ও তার পরিবারের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। যাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন। ওই ডায়েরিতে ১০ জন দালালের তথ্য পেয়েছে র্যাব। যারা কামালের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।’
এই দালালরা ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, কলকাতা, মুম্বাই, দুবাই, মিশর ও লিবিয়াতে পাচারের কাজ করে থাকে। তাদের নাম ঠিকানা সব পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম বলা হচ্ছে না।
লে. কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, ‘হাজী কামাল প্রায় ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বাস করছেন। এর মধ্যে প্রায় এক যুগ ধরেই তিনি মানবপাচারে জড়িত। তার কাছ থেকে বিভিন্ন মানুষের ৩১টি পাসপোর্ট ও একাধিক ব্যাংকের চেক বই উদ্ধার করা হয়েছে। তার সম্পদের খোঁজ করা হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে কোথায় কোথায় টাকা গেছে, তা জানার পর মানি লন্ডারিংয়ের মামলাও হবে তার বিরুদ্ধে।’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ‘তার কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নেই। তিনি মূলত একজন টাইলস কনট্রাক্টর। প্রচুর পরিমাণে টাইলস শ্রমিক তার সংস্পর্শে আসে। এ সুযোগে সে তাদেরকে প্রলুব্ধ করে যে, লিবিয়াতে টাইলস মিস্ত্রীদের অনেক চাহিদা। সেখানে গেলে দিনে ৫/৬ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।’
ইচ্ছুকদের কাছ থেকে মাত্র এক লাখ টাকা নিতেন, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর বাকি ৪/৫ লাখ টাকা পরিবারের কাছ থেকে শর্ত মতো আদায় করতেন বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লিবিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে যাওয়াদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ লোকই কামালের মাধ্যমে গেছেন। কামালকে মাদারীপুর রাজৈর থানা ও কিশোরগঞ্জের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, অবৈধভাবে ইউরোপে প্রেরণকালে সম্প্রতি লিবিয়ার মিজদাহ শহরে গত ২৮ মে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১১ বাংলাদেশি মারাত্মকভাবে আহত হন। ওই ঘটনা দেশ বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তদন্তে উঠে আসে এই হাজী কামালের নাম। এরপর সোমবার (১ জুন) ভোরে র্যাব-৩ এর একটি দল গুলশান থানাধীন শাহজাদপুরের বরইতলা বাজার খিলবাড়ীরটেক এলাকা থেকে হাজী কামালকে (৫৫) গ্রেফতার করে। তিনি কুষ্টিয়া জেলা সদরের জামাত আলী মন্ডলের ছেলে।
শুধু লিবিয়া নয়, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের পাঠিয়েছেন।