আজ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস।
আজ ঐতিহাসিক ৭ই জুন ৬ দফা দিবস।
৭ জুন বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদ ও আত্মত্যাগের সংগ্রামী একটি দিন।
লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৯৪০ সালে যেমন ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ ব্রিটিশ শোষকদের এদেশ থেকে তাড়ানোর জন্য ঐক্যমতে এসেছিল, ঠিক তেমনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬’র এদিনে ঘোষিত ৬ দফাকে তখনকার পূর্ববাংলার জনগণ পাকিস্তানিদের বাংলা থেকে তাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
পরবর্তীতে ৬ দফার প্রতিটি দফা বাংলার ঘরে-ঘরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এ ৬টি দফা সম্পর্কে যখন সম্যক ধারণা অর্জন করলো, তখন এটি বাঙালির মুক্তির সনদে পরিণত হলো।
১৯৬৬ সাল। ৭ জুন ৬ দফা দেওয়ার আগে, ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের এক জনসভায় ৭ জুনে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
#১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ
প্রস্তাব – ১ :
শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি:
দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের। আইন পরিষদের (Legislatures) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম। এবং এই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারনের সরাসরি ভোটে।
প্রস্তাব – ২ :
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা:
কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।
প্রস্তাব – ৩ :
মুদ্রা বা অর্থ-সমন্ধীয় ক্ষমতা:
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু’টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহন করা চলতে পারেঃ-
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।
অথবা
(খ)বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসু ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থগেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মুল্ধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।
প্রস্তাব – ৪ :
রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:
ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
প্রস্তাব – ৫ :
বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা:
(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।
(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।
(ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন বাধা-নিষেধ থাকবে না।
(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বানিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বানিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
প্রস্তাব – ৬ :
আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা ফিতে হবে।
১৯৬৬ সালের ৬দফার মাধ্যমে নিহিত ছিল বাংলার মুক্তিসনদ, ৬দফার গুরত্ব সদূরপ্রসারি। ৬ দফা দাবি বাঙ্গালীকে স্বাধীনতা অর্জন তরান্বিত করে। বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে ৬দফার গুরত্ব অনেক।