জননেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ
মোহাম্মদ হাসানঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পুরোধা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত বন্ধু ও পরম বিশ্বস্ত সহকর্মী, চট্টগ্রাম থেকে ৫৪ তে যুক্তফ্রন্টের এমএলএ, ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের সাংসদ এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৭৪ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে একমাত্র জহুর আহমদ চৌধুরীই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও সামরিক মর্যাদায় সমাহিত হন। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দনে তাঁর জানাজায় শরিক হন এবং সেখানে থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরীর মরদেহ কাঁধে বহন করে দামপাড়া পল্টন রোডের সমাহিত করার স্থানে নিয়ে আসেন। ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তা প্রচারের জন্য চট্টগ্রামে জহুর আহমদ চৌধুরীর নিকট পাঠিয়েছিলেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় (২৮মার্চ ১৯৭১) ভারতের সাহায্যের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য ও সেদেশের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করেছিলেন।জননেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী ১৯১৫ সালে কাট্টলীতে জন্মগ্রহণ করেন।
শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। ১ জুলাই তাঁর ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
জহুর আহমদ চৌধুরীর বহু পরিচয়। তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, পথিকৃৎ শ্রমিক নেতা, ভাষাসৈনিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য। কিন্তু এসব পরিচয় একটি সূত্রে গাঁথা, সেটি হলো রাজনীতি।
রাজনীতির প্রতি তিনি এতই সমর্পিত ছিলেন যে পরিবারের কথাও তাঁর মনে থাকত না। যেসব কর্মী রাজনীতির সূত্রে তাঁর কাছাকাছি আসতেন, তাঁদের লেখাপড়া, ভালোমন্দ, নানাদিকে তীক্ষ দৃষ্টি রাখতেন। এই নিঃস্বার্থ মনোভাবের পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। মানুষ তাঁকে হূদয় উজাড় করে ভালোবেসেছে, সমর্থন দিয়েছে। সেটা ১৯৫৪ সালের ঘটনা, যেবার হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলার মাটি থেকে মুসলিম লীগের নাম-নিশানা প্রায় মুছে ফেলেছিল। জহুর আহমদ চৌধুরী সে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন যুক্তফ্রন্টের টিকিটে। প্রতিদ্বন্দ্বী সেই সময়ের চট্টগ্রামের শীর্ষ ধনী ও প্রভাবশালী সমাজপতি রেয়াজউদ্দিন বাজারের মালিক শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দিকী। জহুর আহমদ চৌধুরীও তাঁকে খুবই সম্মান করতেন। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা ছিল অসম লড়াই। তবু এই অসম লড়াইয়ে জয়ী হলেন জহুর আহমদ চৌধুরী। এই ঘটনা কতখানি গুরুত্ববাহী তা বোঝা যায় সে সময়ের সংবাদপত্র দেখলে। কলকাতার বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক স্টেটসম্যান সম্পাদকীয় পর্যন্ত প্রকাশ করে। তাতে মন্তব্য করা হয়, জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে রফিউদ্দিন সিদ্দিকীর এই পরাজয়, ‘মক্ষিকার কাছে হস্তীর পরাজয়ের সমতুল্য’। জহুর আহমদ চৌধুরী দেশ ভাগের পর কলকাতা থেকে প্রথমে ঢাকা, তারপর জন্মস্থান চট্টগ্রামে এসে ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি চালক ও দোকান কর্মচারীদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এভাবে ধীরে জনসম্পৃক্ত হন তিনি। তারপর কর্ণফুলীর পানি যতই গড়িয়েছে জহুর আহমদ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তি ততই বেড়েছে। মৃত্যুর আগেও তিনি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীই একমাত্র নেতা, যিনি পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও সামরিক মর্যাদায় সমাহিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।তিনি আমাদের অন্তরের অন্তস্তলে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।