আয়মান সাদিকের ভিডিওটা দেখে আমার কাঁদতে ইচ্ছা করছে।
আয়মান সাদিকের ভিডিওটা দেখে আমার মাটিতে বসে কাঁদতে ইচ্ছা করতেসে। আমার মনে পড়তেসে অনন্ত বিজয় দাসের কথা। তিনি জানতেন তাঁকে মেরে ফেলা হবে। ক্রমাগত তাঁকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক সংস্থা পেন-এর গেস্ট হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন অসম্ভব মেধাবী এই মানুষটি!
চেষ্টা করছিলেন সবকিছু গুছিয়ে আনতে। ভিসা প্রসেসিং-এ দেরি হয়ে যাচ্ছিল। উদ্ভ্রান্তের মত পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন আততায়ীদের হাত থেকে। ২০১৫ সালের ১২ই মে নিজের বাসার একটু সামনে প্রকাস্য দিনের আলোয় রাস্তার মাঝখানে তাঁকে কুপিয়ে মারা হয়।
তাঁর মৃতদেহের ছবি আমি দেখেছি। হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করতে চাইছিলেন। হাতটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। অনন্ত বিজয় দাসের ক্ষত বিক্ষত হাত দেখার পর থেকে প্রতিটা কোরবানির ঈদে চাপাতি দিয়ে যখন গরুর পা কোপানো হয় আমি ট্রমার মধ্যে চলে যাই! আমার খিঁচুনি ওঠে। আমার অনন্ত বিজয় দাসের কথা মনে হয়।
অনন্ত বিজয়ের মায়ের অশ্রু আমাদের মনে একটুও দাগ কাটতে পারে নাই। মহিলা এখনো কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে যান!
—
হেফাজতে ইসলাম পাঁচই মে গাবতলীতে রাস্তার উপরে দুটো লাইন লিখেছিল। বহুদিন সেই পথ দিয়ে যেতে লাইন দুটো আমি দেখেছি।
বিড়াল-কুকুর মেরো না
নাস্তিক পেলে ছেড়ো না
নাস্তিক আপনার অপছন্দ হতেই পারে। এটা আপনার রাইট। কিন্তু আপনার অপছন্দের মানুষকে আপনি মানুষের কাতারের চাইতে কি নিচে নামাতে পারেন? আপনার কাছে একজন নাস্তিক বিড়াল-কুকুরের চাইতেও অধম?
এইটাকে বলে ডিহিউম্যানাইজেশন। গণহত্যাকে জায়েজ করার জন্য যুগে যুগে মানুষকে নিচু করা হয়েছে। রুয়ান্ডায় দেখা যায় সংখ্যাগুরু হুতুরা সংখ্যালঘু তুতসিদের বলতো ককরোচ অর্থাৎ তেলাপোকা। ১০০ দিনে হুতুরা ৩ লাখের বেশী তুতসি মেরে সাফ করে ফেলেছিল!
আপনি যখন একজন মানুষকে তেলাপোকা বলবেন এবং বারবার বলতে বলতে একসময় ভাবতে শুরু করবেন সে সত্যিই তেলাপোকা তখন তাকে মারার সময় আপনার আর মানুষ মারার কষ্টটা হবে না। আপনার মনে হয়ে আপনি নোংরা একটা তেলাপোকা মারছেন।
কম্বোডিয়ায় শিশুদের মদের সাথে মানুষের রক্ত মিশিয়ে খাওয়ানো হতো। তাদের বোঝানো হত মানুষের রক্ত তাদের শক্তি বাড়ায়। এই শিশুদের খুব সহজে খুনি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল বলেই পলপটের ক্ষুদ্র একটা বাহিনী কম্বোডিয়ায় ২০ লাখ মানুষ খুন করে ফেলতে পেরেছিল!
—
মানুষকে জাস্ট মানুষ হিসেবে সম্মানটা দিতে শিখলেই হবে। আপনার সমকামি পছন্দ না? ফাইন। আপনার নাস্তিক পছন্দ না? ফাইন। আপনি তাদের বিরুদ্ধে লেখেন, কথা বলেন।
কেন তাকে মেরে ফেলতে চান?
আমরা এই মুহূর্তেই যদি ভিন্ন ধর্মের বা নিধার্মিক মানুষদের ডিহিউমেনাইজেশন প্রক্রিয়াটাকে অন্তত বন্ধ না করতে পারি তাহলে এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটতেই থাকবে। এবং অচিরেই এটা একটা মাসকিলিং বা জেনোসাইডে রূপ নেবে।
আপনি যেই তরিকার মানুষই হন একটা জেনসাইড শুরু হলে আপনি কিন্তু বাঁচবেন না। আজহারির ভক্ত হলে রাজ্জাক বিন ইউসুফ আপনাকে কোপাবে রাজ্জাক বিন ইউসুফের ভক্ত হলে শিবির আপনাকে কোপাবে।
‘সহি মুসলমান’ একটা মিথ! পরম শূন্য তাপমাত্রার মত এটাকেও কখনো অর্জন করা যায় না!
এসএম, প্রানের৭১ নিউজ।