চলে গেলেন বাংলা গানের কিংবদন্তি প্লেব্যাক সম্রাট কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর
চলে গেলেন ঢাকাই ছবির প্লেব্যাক সম্রাট কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। দীর্ঘদিন ধরে মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে সোমবার (৬ জুলাই) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহীতে বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
কিংবদন্তি গায়কের মৃত্যুর খবর শোনার পর সঙ্গীতাঙ্গন তথা দেশের শোবিজে শোকের গভীর ছায়া নেমে এসেছে। টানা নয় মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকে গত ১১ জুন বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তারপর থেকে তিনি রাজশাহীতে বোনের ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অসুস্থ অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা করেছেন।
এন্ড্রু কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সেজন্য ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিতি পান। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প…, হায়রে মানুষ রঙের ফানুস…, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে…, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি…, আমার বুকের মধ্যে খানে…, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান…, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা…, সবাই তো ভালোবাসা চায়… প্রভৃতি। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
এন্ড্রু কিশোর আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সঙ্গীতে তালিম নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ ছবির ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে।
তার রেকর্ড করা দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতীজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার কণ্ঠ শোনেন এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ব্যক্তিগত জীবনে এন্ড্রু কিশোরের দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সংগীত শিল্পী ছাড়াও এন্ড্রু কিশোর একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।