প্রাণের ৭১

বিশ্ব ধরেই নিচ্ছে বাংলাদেশ জালিয়াতির দেশ : শাহরিয়ার কবির

মহামারি করোনাভাইরাস শনাক্ত ও এর চিকিৎসা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের ‘গডফাদারদের’ গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবির।

 

তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ও ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়নে যে মাফিয়া চক্র গড়ে উঠেছে, তার পেছনে কাদের হাত রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে।’

 

করোনা শনাক্তে জালিয়াতির বিষয়ে শনিবার (১১ জুলাই) জাগো নিউজের কাছে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

 

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। অথচ একটি ঘটনা সমস্ত অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। কে এই সাহেদ? কারা তৈরি করল? সাহেদদের তৈরি হওয়ার পেছনে মিডিয়ারও দায় আছে। টকশোতে বড় বড় কথা বলতেন। তাকে সুযোগ দেয়া হতো। একবার টকশোতে গিয়ে তার সঞ্চালনায় রীতিমতো অবাক হই। ধমক দিয়ে থামিয়ে দেই।’

 

রাজনীতির ছত্রছায়াতেই সাহেদদের উত্থান কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সাহেদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরাই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেছে। আর রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন তাদের সময় থেকেই। প্রশ্ন হচ্ছে- এই দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগে ঢুকে মাফিয়া বনে যাচ্ছে কী করে? এর দায় ক্ষমতাসীনরা এড়াতে পারে না। এমন অপরাধের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিরাও জড়িত। মেডিকেল মাফিয়া সাহেদের সঙ্গে যখন চুক্তি হলো- তখন মন্ত্রী, সচিব, ডিজি জানতেন তার লাইসেন্স নেই। অথচ চুক্তি করার সময় সবার আগে লাইসেন্স শো করতে হয়। এই অপরাধ তাদের সবার।’

 

এমন দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ধরেই নিচ্ছে বাংলাদেশ জালিয়াতির দেশ। এই ঘটনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। রেমিট্যান্স, প্রবাসীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ব মিডিয়ায় এই দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। ইতালি থেকে প্রবাসীদের ফেরত পাঠানো হলো। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা হচ্ছে- করোনার বিস্তারে এই ঘটনা সহায়ক হয়েছে। এই অপরাধের কোনো ক্ষমা হতে পারে না। এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

 

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে সর্বত্রই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন দিনের শিশুর মরদেহ কবর থেকে তুলে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই সভ্য সমাজে এটি কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। অথচ স্থানীয় প্রশাসন আর আওয়ামী লীগ মিলে এর সমাধান টেনেছে। আমরা দেখেছি, যখনই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়, তখনই রাজনৈতিকভাবে মিটমাট করার চেষ্টা চলে। এমন হয় বলেই বারবার এমন পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে। সমাজ ক্রমশই অধঃপতনে যাচ্ছে, যা এসব থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে।’

 

উল্লেখ্য, নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের প্রধান কার্যালয়, উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। রিজেন্ট হাসপাতাল ও গ্রুপের মালিক সাহেদ পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে র‍্যাব। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ।

 

সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দিতেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাহেদ একসময় বিএনপি করতেন। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার তোলা ছবি ভেসে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*