জাতিসংঘের শতবর্ষ পূর্তির আগেই বিশ্ব থেকে পরমাণু অস্ত্র বিলোপ করতে হবে: সাবের হোসেন চৌঃ
মোহাম্মদ হাসানঃ জাতিসংঘের শতবর্ষ পূর্তি ২০৪৫ সালের আগেই বিশ্ব থেকে পরমাণু অস্ত্র পুরোপুরি বিলোপে উদ্যোগী হতে সব দেশের সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন পার্লামেন্টারিয়ান্স ফর নন-প্রলিফারেশন এন্ড ডিজার্মামেন্টের (পিএনপিডি) সহ-সভাপতি, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার আন্তর্জাতিক দিবসে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে সারিয়ে তুলে টেকসই অগ্রগতির পথে পা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার এই আহ্বানে সমর্থন এবং সাড়া দেয়ার জন্য আমরা সব দেশের প্রতি অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, সরকারগুলোকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দায় মানা এবং পরমাণু অস্ত্রের পেছনে ব্যয় হওয়া এই সম্পদ মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, তাদের জীবিকার সংস্থান এবং প্রকৃতির সুরক্ষার পেছনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বরও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পরমাণু অস্ত্রের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ এবং পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত প্রতিযোগিতার পরিণতিতে বৈশ্বিকস্তরে পারমাণবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, দিগন্তরেখায় আমরা দেখতে পাচ্ছি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাত, চরম আবহাওয়া, জীববৈচিত্র্যের আশঙ্কাজনক বিলুপ্তি, খাদ্য-নিরাপত্তার ওপর ঝুঁকি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সম্পদের অবিবেচক ব্যবহারে মহাসাগরের ওপর অকল্পনীয় চাপের ফলে সৃষ্ট মহাবিপদের পূর্বাভাস। ফলে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর অমীমাংসিত সংঘাতের কারণে মানবতার ওপর যে কঠিন হুমকি তৈরি হচ্ছে, সেটি ভুলে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিছু কিছু দেশ এখনো তাদের পারমাণবিক সামর্থ্য ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস থেকে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। ফলে দিন দিন পরমাণু বিপর্যয়ের হুমকি আরো বাড়ছে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে অমানবিক অস্ত্রটির নাম পরমাণু অস্ত্র এবং তার ধ্বংসলীলা কেবল নির্দিষ্ট কিছু সামরিক স্থাপনা কিংবা সেনাশক্তি ধ্বংসের মধ্যেই সীমিত রাখা অসম্ভব।
পিএনপিডি সহ-সভাপতি বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো প্রতিবছর এসব অস্ত্র সংরক্ষণ, আধুনিকায়ন ও মোতায়েনের পেছনে ১ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে। বিশ্ব পুরোপুরি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হলে এই বিপুল অর্থ মানবিক নিরাপত্তার প্রকৃত খাতগুলোয় বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে আইপিইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে পিএনপিডি। ২০১৪ সালে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা গৃহীত হওয়ার কথাও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। পরমাণু শক্তিধর নয়, এমন দেশগুলো এ লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে তার মধ্যে রয়েছেÑ পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করে কড়া আইন পাস, পরমাণু অস্ত্র খাতে সরকারি বিনিয়োগের অবসান, পরমাণু-অস্ত্রবিহীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষর, অনুমোদন ও তার বাস্তবায়ন।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তাদের দায়ের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দেশের সুশীল সমাজ তাদের যার যার সরকারের উদ্দেশে অনেক আগে থেকেই এ আহŸান জানিয়ে আসছেন। বর্তমানে এসব দেশের আইনপ্রণেতারাও যোগ দিচ্ছেন এ আহ্বানে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, পরমাণু যুদ্ধে কারোরই বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং কখনোই এ যুদ্ধে জড়ানো যাবে না। ১৯৪৫ সালের ২৪ জানুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রথম প্রস্তাবনা অনুসারে বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করাটা জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মৌলিক দায়িত্ব।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের এ প্লেনারি বৈঠকে বক্তব্য রাখার জন্য সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির বৈশ্বিক সুশীল সমাজের যে দুজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানান সাবের হোসেন ছিলেন তাদের একজন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আহূত এ ভার্চুয়াল ইভেন্টে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘের অন্যান্য প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।