৭২’র মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় শেষবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করা হোক: আবীর আহাদ
২০১৭ সালের তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্যদের দিয়ে ২০২১ সালের যাচাই যাচাই হওয়ার মানে অভিজ্ঞ বাণিজ্যিক ধান্দাবাজদের পুনরায় ব্যবসা ফেঁদে অর্থ কামানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া । এভাবে অমুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বহাল করার অশুভ খেলার আয়োজন চলছে বলে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান লেখক গবেষক আবীর আহাদ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ।
আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করে আবীর আহাদ বলেন, গোটা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকাররাও মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে অবস্থান করছে বলে সরকারের কর্তাব্যক্তিরাসহ প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বদ্ধমূল ধারণা । মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে এসব অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদের জন্যে বহুকাল ধরে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ প্রচুর লেখালেখি করে আসছি । তারই ফলস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩৩ তালিকার মধ্যে বেসামরিক গেজেটধারীদের ভেতর বেশিসংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা আছে ধারণা করে অবশেষে আগামী ৯ জানুয়ারি সারা দেশের জেলা ও উপজেলায় একযোগে পুনরায় যাচাই বাছাইয়ের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে । বেসামরিক গেজেটধারীদের যাচাই বাছাই করার লক্ষ্যে নতুন করে যে কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তা নিয়ে সারা দেশের প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা গভীর উৎকণ্ঠা ও হতাশা প্রকাশ করছেন । বলা চলে, সবার অভিযোগ এই যে, ২০১৭ সালের বাণিজ্যনির্ভর যাচাই বাছাই কমিটির সাথে যারা জড়িত ছিলেন, সেসব অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের দিয়ে আগামী ৯ জানুয়ারির অনুষ্ঠিতব্য মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হচ্ছে ! এটা যদি সত্য হয় তাহলে যাচাই বাছাই কার্যক্রমটি যে পুনরায় বাণিজ্যনির্ভর হয়ে নিষ্ঠুর প্রতারণা ও তামাশায় পর্যবসিত হবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই । এ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ কুশীলবদের অনৈতিকতার যোগসাজশে ২০১৭ সালের মতো অমুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় পার পেয়ে যাবে বলে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে । দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার অভাব নেই যে, পুরোনো ধান্দাবাজদের দিয়েই নতুন করে যাচাই বাছাই কমিটি করতে হবে ! নতুন কমিটিতে পুরনোদের রাখার কর্মসূচি পরিহার করুন ।
আবীর আহাদ বলেন, আমি তো বলেই আসছি, জামুকার চলমান যাচাই বাছাই কর্মসূচি মূলত: কোনোই সঠিক পদক্ষেপ নয় । এ পদ্ধতিতে অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক সংযোগের কারণে সাক্ষ্যদাতা ও যাচাই বাছাই কমিটির সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তার কোনোই নিশ্চয়তা নেই । আমরা বলেছি, উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে একটি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিশনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সরকারের বাহাত্তর সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে শেষবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করা হোক । আমাদের প্রস্তাব উপেক্ষা করে জামুকার মহাশয়রা চলমান পদ্ধতিতেই যখন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করতে মনস্থির করেছেন তখন বাধ্য হয়েই আমরাও তাতে সমর্থন জানিয়েছি ।
বিবৃতিতে আবীর আহাদ বলেন, জামুকার চলমান মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই যাতে দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য ইতোমধ্যেই আমি একটা পরামর্শ দিয়েছি যে, যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য, অমুক্তিযোদ্ধা ও সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক ধান্দাবাজদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে যাচাই বাছাই এলাকায় এক্ষুনি এনএসআই এসবি ডিবি ডিজিএফআই ও দুদকের নিশ্ছিদ্র গোয়েন্দা জাল বিস্তারের পাশাপাশি যাচাই বাছাই স্থলে তারাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও কড়া নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হোক । কেউ অনৈতিক লেনদেনে জড়িত হওয়াসহ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হলে তৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখুন । বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল আমাদের সুপারিশটি আমলে নিয়েছেন ।
জামুকার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আবীর আহাদ বলেন, যে পদ্ধতিই গ্রহণ করুন না কেনো, আমরা চাই, যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে যেনো কোনো প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চক্রান্তের শিকার হয়ে অমুক্তিযোদ্ধা বলে গণ্য না হন—-তদ্রুপ অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যেনো কোনো অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ফিরে না আসেন । এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও সম্মানবোধের প্রশ্ন ।
পরিশেষে আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধুমাত্র বেসামরিক গেজেটধারীদের যাচাই বাছাই নয়—-মনে রাখতে হবে, এ ধরনের যাচাই বাছাইয়ে ঐ তালিকার মধ্যে অবস্থানকারী প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে একটা অবমাননাও বটে । সুতরাং পর্যায়ক্রমে অবশ্যই অন্যান্য সব তালিকার মধ্যে অবস্থানকারী অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে । কারণ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র নামের জঘন্যতম কলঙ্ক । তাদের কারণে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের চোখে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন । মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভুয়ারা বীরদর্পে মুক্তিযোদ্ধা সেজে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে ভাগ বসিয়ে তাদের সম্মানহানি করছে, জনগণ তথা প্রজাতন্ত্রের অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি লুটপাট ও ভোগ করে চলেছে ! এটা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের জনগণ কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারেন না । অতএব বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ জানুয়ারিকে একটা টেস্টকেস হিশেবে দেখছেন । যাচাই বাছাই সফল হলে আমরা যেমন জামুকাকে অভিনন্দন জানাবো, কিন্তু কোনোপ্রকার প্রতারণা ও তামাশা করা হলে আমরাও যেকোনো চরম পন্থা বেছে নিতে বাধ্য হবো ।
লেখকঃ আবীর আহাদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ রচয়িতা