বৃহস্পতিবার উৎসবের রাত বাংলাদেশের
ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আগামীকাল ১০ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি উৎসবের রাত। এই রাতেই তথ্য-প্রযুক্তিগত দিক থেকে মর্যাদার আসনে স্থান পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পদ্মা সেতুর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হবে দেশেবাসীর জন্য দ্বিতীয় গর্বের বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কম্পানি ‘স্পেসএক্স’-এর ফ্যালকন-৯ রকেট ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে উড়াল দেবে। ‘স্পেসএক্স’ জানিয়েছে, ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের সময় বিকেল ৪টা ১২ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশে এই সময়টি হচ্ছে ১১ মে রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিট।
উৎক্ষেপণস্থল ফ্লোরিডায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ সরকারের ৪২ সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবে। এ ছাড়া সাংবাদিকসহ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে সেখানে থাকবেন। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন উৎক্ষেপণস্থল থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে প্রথম গ্যালারি থেকে এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করবেন। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় গ্যালারিতে থাকতে পারবেন আরো প্রায় ২০০ জন। এরপর পাঁচ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি উন্মুক্ত স্থান থেকেও এ উৎক্ষেপণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে এটি দেখার ব্যবস্থা থাকছে। বিটিভি বৃহস্পতিবার ওই রাত ২টা থেকে উৎক্ষেপণ প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয় সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবে। কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্যাটেলাইটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়ার মাধ্যমে আমরা এর উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত তারিখ জেনেছি। তার পরও এ ধরনের উচ্চ এবং জটিল প্রযুক্তিগত বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চয়তা থাকে না। আমরা আশা করছি, কারিগরি এবং আবহাওয়াগত কোনো সমস্যা না দেখা দিলে বৃহস্পতিবার রাতেই দেশের ১৬ কোটি মানুষের অধীর অপেক্ষার অবসান হবে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠানো একটি সাহসের বিষয়। এই সাহস দেখিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পৌঁছতে যাচ্ছি। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তারই উত্তরসূরি হিসেবে মহাকাশে যাচ্ছে দেশের প্রথম যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে এ বিষয়ে তাঁর মেধা ও জ্ঞান কাজে লাগিয়েছেন।’
সাইফুল ইসলাম জানান, জ্বালানিসহ তিন হাজার ৭০০ কেজি ওজনের স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর ৩৬ হজার কিলোমিটার ওপরে কক্ষপথের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে আট থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। এয়ার ট্রাফিকের কারণে এ সময় লাগবে। এরপর স্যাটেলাইটটি আমাদের গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযাগ স্থাপন করবে। বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে আরো সময় লাগতে পারে।
এদিকে স্যাটেলাইটটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেড নামের একটি কম্পানি গঠনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। জনবল ১৮ জন প্রকৌশলীসহ ৩৫ জনের মতো। ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণ শেষ হয়েছে।