প্রাণের ৭১

ভোলায় ৩ হাজারেরও বেশি মসজিদে মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা চলছে

জেলার ৭ উপজেলায় ৩ হাজারেরও বেশি মসজিদে মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ৩ হাজার ২৭৪টি মসজিদের ইমামরা প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে অথবা পরে (সুবিধাজনক সময়ে) এর কুফল স্থানীয় মুসল্লীদের মাঝে তুলে ধরেন। ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ সকল সামাজিক অন্যায়, বিশৃঙ্খলা, অপরাধ বন্ধে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস কখনোই সমর্থন করে না, সে বিষয়ের সঠিক ইসলামিক ব্যখ্যাও জনসাধারণের মধ্যে মসজিদে প্রচার করা হচ্ছে। একইসাথে মসজিদের মোয়াজ্জিনরাও মানুষের মাঝে মাদক বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে।
জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুল কুদ্দুছ (নোমান) বাসস’কে জানান, প্রতি জুমার নামাজের দিন প্রত্যেক মসজিদে বিশেষ করে মাদক ও জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বক্তব্য দিতে জেলার সকল ইমামদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া আছে। শহর, গ্রাম, প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সর্বত্রই মসজিদের ইমামদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।
উপ-পরিচালক বলেন, ইমামদের সম্মান করে কথা বেশ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে মানুষ। তারা যখন মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় তখন, এর একটা ভালো প্রভাব লক্ষ্য করা যায় সমাজ জীবনে। ফলে সমাজে জঙ্গিবাদ, যৌতক, বাল্যবিয়ে, মাদকসহ অন্যন্য অপরাধ প্রবণতা অনেকটাই কমে আসছে এবং মানুষের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা জাগ্রত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের কালীবাড়ি সড়কের মসজিদ-ই-মুকবুল-এর ইমাম মুফতী মো. রিয়াজউদ্দিন কাসেমী প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি জীবনে মাদকের ভয়াবহতা সর্ম্পকে আলোচনা করেন।
মুফতী মো. রিয়াজউদ্দিন আরো জানান, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে লোক সকল নিশ্চয়ই মদ, জুয়া এ দুটোই নাপাক, এগুলো শয়তানের কর্মকান্ড, এগুলো থেকে তোমরা বেঁেচ থাকো’। আল্লাহতায়লার এমন নির্দেশনা জারি করার পর আমাদের নবী হজরত মো. (স.আ.) শিখিয়েছেন কিভাবে মাদক থেকে বাঁচা যায়। মসজিদে যখন আমরা (ইমামরা) মুসুল্লীদের মাদকের ব্যাপারে সতর্ক করছি তখন তারো সহমত পোষণ করছে এর বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন, মসজিদে আমাদের সকল স্তরের মুসুল্লীরা যাতায়াত করেন। সেখানে অন্য কারো কথার চেয়ে ইমামদের কথা অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। এছাড়া আমাদের প্রত্যেক থানার ওসি সাহেবরা বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে ইমামদের সাথে জুমার দিনে মাদক বিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। এতে করে সাধারণের মধ্যে মাদক পরিহারের আগ্রহ দেখা দিচ্ছে।
এদিকে মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইমামদের অবস্থান, শহরের মসজিদের চেয়ে পল্লী অঞ্চলের মসজিদের এলাকায় বেশি প্রভাব ফেলছে। এর কারণ গ্রামের মানুষ অনেক বেশি ধর্মপ্রাণ। ইমামদের মাধ্যমে এর কুফল জানতে পেরে গ্রামীণ সমাজ আজ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আবার কোন কোন এলাকায় সম্মিলিত উদ্যোগে বড়রা খোঁজ রাখছেন ছোটরা মাদকে আকৃষ্ট হচ্ছে কিনা। মাদক বিক্রেতাদের প্রতিহত করা হচ্ছে প্রায় সর্বত্রই।
উপজেলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আফজাল হোসেন বাসস’কে বলেন, আমরা প্রতি শুক্রবার খুতবার আগে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেই এবং মানুষ তা মন দিয়ে শোনে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম যুব সমাজের মধ্যে বেশি কথা বলতে হয়। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক অপরাধের কুফল সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়।
উপ-পরিচালক আব্দুল কুদ্দুছ আরো জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদের ইমামরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় গত এক বছর যাবত দেশে জঙ্গিবাদ নেই বললেই চলে। মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমানে ইমামদের যে অবস্থান তাতে আশা করা যায় অচিরেই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
বাসস






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*