শসার গুণের শেষ নেই অ- অ অ+ কাঁচা শসা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী!
কাঁচা শসা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, তা অনেকেরই হয়তো অজানা। তার পরও ইফতারে পদটি রাখে অনেকে। ভাজা-পোড়ার সঙ্গে অথবা ছোলা-মুড়ি মাখার স্বাদ বাড়াতেও শসার ব্যবহার আছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, সারা দিন রোজা রাখার পর পানিশূন্যতা পূরণে শসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
হয়। অশেষ পুষ্টিগুণও রয়েছে শসার। শসা অনেক রোগ ঠেকায়। প্রতিদিন শরীরে যেসব ভিটামিনের প্রয়োজন, তার বেশির ভাগই রয়েছে শসায়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শসায় পানির পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। ফলে এটি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এবং ভেতরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে দেহ শীতল রাখতে সহায়তা করে। তা ছাড়া শসায় ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। প্রতি ১০০ গ্রাম শসায় আছে মাত্র ১৫ গ্রাম ক্যালরি। কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই। সুতরাং মেদ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রেও শসা অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই শসা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তবে সারা দিন রোজা রাখার পর পানিশূন্যতায় ত্বক শুকিয়ে যেতে থাকে। শসা ত্বকে ফিরিয়ে আনতে পারে স্বাভাবিক কমনীয়তা। এ ছাড়া শসা পাকস্থলীর কার্যকারিতা বাড়িয়ে হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তিনি আরো বলেন, শসার গুণের কোনো শেষ নেই। এতে এমন সব পুষ্টিগুণ আছে যা মাথাব্যথার মতো শারীরিক দুর্বলতাও কাটিয়ে তুলতে সক্ষম। তিনি জানান, শসা খোসাসহ খেলেও কোনো সমস্যা নেই। একটু ভালো করে ধুয়ে নিলেই হয়। যদি ছুলে খেতে হয় তবে পাতলা করে খোসা ছোলার পরামর্শ দেন ড. মনিরুল। অনেক গভীর করে খোসা ছাড়ালে পুষ্টিগুণ কমে যায়।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধেও রয়েছে শসার ভূমিকা। শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল নামে তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন, মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া শসা বা শসার রস ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শসায় থাকা স্টেরল নামক উপাদান রক্তের কোলেস্টেরলের আধিক্য কমাতে ভূমিকা রাখে।
শসায় আছে ভিটামিন সি, সিলিকা, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও খাবার উপযোগী আঁশ। বিদ্যমান এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ দুটিই নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া শসায় আছে স্টেরল নামের এক ধরনের উপাদান, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্টেরল মুটিয়ে যাওয়া রোধ করতেও সহায়ক। এমনকি শসার পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও অনেক সাহায্য করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শসার আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে সাহায্য করে।
পানিশূন্যতার কারণে শরীরে অবসাদ ভাব আসে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। কয়েক স্লাইস শসা খেলে ক্লান্তি থাকে না।
শসায় থাকা খনিজ সিলিকা চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে। এ ছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শসার মধ্যে থাকা পানি দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাড়ুর মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে পাথর হয় না।
রোজাদারদের অনেকেই বলেছে, তারা এত কিছু না জেনেই ইফতারে শসা খায়। রাজধানীর নর্দা এলাকার বাসিন্দা আলফত আলী জানান, বংশপরম্পরায় তাঁরা ইফতারে শসা রাখতে দেখে আসছেন। এ কারণে তাঁরাও ইফতারে শসা খান। বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছেন শসা শরীর ঠাণ্ডা রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়। কিন্তু কখনো শসার পুষ্টিগুণ জানার চেষ্টা করেননি।