প্রাণের ৭১

সংস্কারপন্থি এগার নেতা বিএনপি’র মূল ধারায় ফিরলেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল শক্তিশালী করার জন্য নিষ্ক্রিয় ও বহিস্কৃত নেতাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ১১ নেতাকে দলে নেওয়া হয়েছে। এসব নেতারা তাদের অতীতের ভুল স্বীকার করে দলের মূলধারায় ফিরতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সংস্কারপন্থী ১১ নেতা সাক্ষাৎ করেন। এ সময় মহাসচিব তাদের দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
দলে ফেরা সংস্কারপন্থীরা হলেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী নওগাঁর আলমগীর কবীর, সাবেক হুইপ জয়পুরহাটের আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, বগুড়ার গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ), ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বরিশালের জহিরউদ্দিন স্বপন, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন, নারায়ণগঞ্জের আতাউর রহমান আঙুর, রাজশাহীর আবু হেনা, পটুয়াখালীর শহীদুল আলম তালুকদার ও ঝালকাঠির ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো।
সংস্কারপন্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নেপথ্যে কাজ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে বিএনপি শিগগিরই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে। মাঠের আন্দোলনে নামার আগে সবাইকে নিয়ে শক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দলের পুরোনো নেতাদের মধ্যে যারা যেখানে আছেন সবাইকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে সংস্কারপন্থীদের দলে নেওয়া হয়।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা যারা দলে নিষ্ক্রিয় ছিলাম তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আমরা দলে আগের মতো সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ পাব।’ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
দলে যোগ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, আমরা দলে আছি, আগে ছিলাম এবং দলে থাকব। আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশ পেয়েছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই বিষয়ে জেনেছি। আমরা দলের নির্দেশনা অনুযায়ী একযোগে কাজ করে যাব।
শহিদুল আলম তালুকদার বলেন, আমরা এত দিন দলে নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এখন আমাদের সক্রিয় হওয়ার জন্য দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন জেলে আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে আছেন এবং সামনে নির্বাচন আছে। আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করব। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এতদিন কেন নিষ্ক্রিয় ছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল আলম তালকুদার বলেন, একটি ঘরের ভেতরে তো বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকতেই পারে। এখন সবাই এক হয়ে কাজ করবো। অনেক সময় অন্য কেউ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এখন দলের জন্য কাজ করবো।তিনি আরও বলেন,আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বা সংসদ সদস্য হওয়া মূল বিষয় নয়, দলকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের লক্ষ্য।
পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হওয়ার আহ্বান:–
এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলকে সময় উপযোগী ও ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার ঐক্য নিশ্চিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে বিএনপিসহ সব গণতন্ত্রকামী দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। যার অংশ হিসেবে গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গুলশান কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মহাসচিব।
বৈঠকে চলমান জাতীয় সংকট, খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সব নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব কাল বিলম্ব না করে সবাইকে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হয়ে দলকে শক্তিশালী করার এবং সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান।পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী বিএনপির নেতাদের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক অব্যাহত থাকবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ১/১১-এর সময়ে দলের সেসময়কার মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১১০ জন সংসদ সদস্য খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে সংস্কার পন্থার পথ নেয়। এ সব নেতাদের অনেকেই নানা সময়ে বিএনপিতে ফিরলেও এখনও ৪৫ জন দলের বাইরে রয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ স্থানীয় পর্যায়ে নেতা হিসাবে আনপ্যারালাল। এ ছাড়া দীর্ঘ ১০ বছরেও তারা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যাননি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে তাদেরকে সক্রিয় করছে বিএনপি।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*