পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনর্বাসন প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকালে এখানে কলাপাড়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনর্বাসন প্রকল্প উদ্বোধন এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বপ্নের ঠিকানা নামে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
তিনি প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য নব নির্মিত ঘরগুলো পরিদর্শণ করেন এবং পুনর্বাসিত পরিবারের কাছে ঘরের চাবি ও রেজিস্ট্রেশন পেপার হস্তান্তর করেন।
তিনি পুনর্বাসন কেন্দ্রের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন এবং গাছের চারা রোপণ করেন।
এরআগে তিনি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এখানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস এবং প্রকল্প পরিচালক প্লান্টের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী সমবেত শ্রমিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন এবং বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
শেখ হাসিনা প্রকল্প শেষ করার জন্য যারা দিনরাত কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ১০ বছরে ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্টীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিমিটেড এবং চায়নিজ সিএমসি কোম্পানী যৌথভাবে অত্যাধুনিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে।
কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা ১৪৯৭ মেগাওয়াট এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন ৬১৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৫ সাল নাগাদ ১০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপদনের পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের ।
একই অনুষ্ঠানে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালি জেলার ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলো হলো- পটুয়াখালি সরকারি কলেজের ৫তলা বিশিষ্ট গার্লস হোস্টেল এবং একাডেমিক কাম-পরীক্ষা হল নির্মাণ কাজ, হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার কলেজের ৪তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মান, ইসহাক মডেল ডিগ্রী কলেজ, কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল কলেজ, আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজ, সুবিদখালী ডিগ্রী এবং দুমকি জনতা ডিগ্রী কলেজের ৪তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ, দুমুকি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন, মির্জাগঞ্জ ৩৩/১ কেভি বিদ্যুৎ সাব স্টেশন, পায়রা বন্দর ও সার্ভিস জেটির মধ্যে শেখ হাসিনা সড়ক, মসজিদ, পায়রা বন্দরে অফিসার্স গেস্ট হাউস এবং ডরমেটরি উদ্বোধন করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী সরকারি কলেজের পাঁচতলা বিজ্ঞান ভবন, শ্রীমান্ত নদীতে ৯৬ মিটার সেতু, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও মির্জাগঞ্জ উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (তৃতীয় পর্ব) প্রকল্পের আওতায় দুটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পায়রাবন্দর প্রকল্পের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসন এলাকার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে উপকূলীয় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় দিনব্যাপী এক সফরে আসেন।
এখানে তিনি পায়রাবন্দর ও পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন এবং বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী বরগুনা জেলা পরিদর্শন করবেন এবং ২১টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
বিকেলে তিনি তালতলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মুক্ত করবেন। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- একটি ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, বামনা ও বেতাগি উপজেলায় দু’টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, জেলা পাঠাগার, জেলা পুলিশ লাইনে নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি ব্যারাকের নির্মাণ কাজ এবং অন্যান্য প্রকল্প, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য দ্বিতল ভবন হোস্টেলের সম্প্রসারণ, আমতলী থানা ভবন, বরগুনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, দোয়াতোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস (উপকূলীয়), হোসনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঘুর্নিঝড় সিডর ও আইলার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় বাঁধসমূহ মেরামত, বরগুনা সদরের এম. বালিয়াতলী ডিএন কলেজ, পাথরঘাটায় সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ ও আমতলীতে ইউনুস আলী খান ডিগ্রি কলেজ-এর চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, তালতলীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, বাকেরগঞ্জ-পাদ্রিশিবপুর-কাঁঠালতলী- সুবিদখালী-বরগুনা সড়ক সম্প্রসারণ কাজ, একটি সেতু, তালতলী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, গৌরচিহ্ন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, বামনায় একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় তালতলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসমাবেশে ভাষণ দেবেন।