প্রাণের ৭১

খালেদার মুক্তি,তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহার বিএনপি’র মূখ্য বিষয় নয়।।

ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে খালেদার মুক্তি নেতারা চায়নি, তারেকে’র নাম মুখে আনেনি,যদিও ৭দফার অন্যতম প্রধান দাবী ছিল খালেদা সহ রাজবন্দিদের মুক্তি’ এবং তারেক সহ সকল নেতার মামলা প্রত্যাহার।
অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ পূর্ব প্রস্তুতি সভায় ফ্রন্ট প্রধান ড.কামাল হোসেন সংলপে অংশগ্রহনকারী নেতাদের স্পষ্ট ব্রিফিং দিয়ে বলে দিয়েছিলেন-“জাতীয় স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন দলীয় বিষয় সংলাপে আলোচনা হবেনা”।
তারপরও বিএনপি’র নেতাগন সংলাপে খালেদার মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং তারেক জিয়ার কথিত সাজানো মামলা প্রত্যাহারের জোরালো দাবী উত্থাপনের জন্যে সংলাপে অংশ গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেশীরভাগ বিএনপির নেতারা আলোচনায় অংশ নিলেও মুল দাবী’র বিষয়টি এড়িয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।

এতে বিষয়টিকে প্রধানতঃ তিন দিকে ব্যাখ্যা করছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা (১) রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বৈঠকে ফৌজদারী মামলার আসামী মুক্তিদানের অনৈতিক দাবী উত্থাপন, বেশীরভাগ অংশ গ্রহনকারী আইনজ্ঞ নেতাদের বিবেকে সায় দেয়নি।
(২) বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাক্তিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে সাধারন ফৌজদারী মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী খালেদা’র মুক্তি,এবং স্বিকৃত খুনী তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের দাবী উত্থাপনের সাহষ অংশ গ্রহনকারী বিএনপি নেতারা দেখাতে পারেননি।
(৩) বিএনপি’র অভ্যন্তরের অধিকাংশ নেতা মনে প্রানে চায়–“খালেদা, তারেক’ মুক্ত বিএনপি”। সংলাপে অংশ গ্রহনকারী নেতাগন ইচ্ছা করেই দাবীটি জোরালো ভাবে উত্থাপন করেননি।

আমি মনে করি-‘দেশের বিশিষ্ট সমাজ সচেতন রাজনীতি বিশ্লেষকদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমত’ই দেশের অন্যতম জনসমর্থিত দল বিএনপি তাঁর নেতৃবৃন্দ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’র ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য এবং প্রনিধানযোগ্য।
২০০১ ইং সাল হতে বর্তমান সময় পয্যন্ত বিএনপির প্রধান দুই নেতার রাজনৈতিক ও আইনী লড়াই এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, দেশ পরিচালনা ও আন্তজাতিক খ্যাতি অর্জনে’র প্রতি একাগ্রচিত্তে দৃষ্টি নিবন্ধ করলে, যে কোন রাজনীতি সচেতন মানুষের অনুধাবন করা মোটেই কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
সংলাপে ব্যার্থতার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি দলে এখন যে অন্তদন্ধ,হম্বিতম্বি, অন্তজ্বালা, বাকবিতন্ডার ঝড় বইছে–“বিষয়টি খালেদার মুক্তি বা তারেকে’র মামলা প্রত্যাহার প্রসংঙ্গে আদৌ নয়।
দীর্ঘদিন হতে মানবতা বিরুধী অপরাধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে’র রায়, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং আদালতের দন্ড প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত মিথ্যাচার, অপপ্রচার, অভিযোগ করে এসেছেন, সেই সমস্ত মিথ্যাচার, অপপ্রচার, অভিযোগ মাত্র একদিনের সংলাপ বৈঠকে, বাংলাদেশের জনগন এবং বহিবিশ্বে তাঁদের আসল মুখোশ উম্মোচন হওয়ার অন্তদাহ ।

মূলতঃ বর্তমান সরকারের গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নিয়ন্তর প্রচেষ্টা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ভুলুন্টিত করে, মানবতা বিরুধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের জনসমক্ষে নির্দোষ প্রমান করাই ছিল উদ্দেশ্য।কারন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি বাংলাদেশের মাটিতে পূণঃ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের দন্ড, বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসা’র ফসল জনসমক্ষে প্রমান যে কোন সময়,যে কোন কালে সর্বাজ্ঞে প্রয়োজন হবে। জামায়াতে ইসলামী’র সূদুরপ্রসারী চিন্তাচেতনায় সংলাপে অংশগ্রহনকারী বিএনপি নেতাগন খালেদার মুক্তি, তারেকের মামলা প্রত্যাহারে শক্ত অবস্থান না নেয়ায়, তাঁদের পরিকল্পনায় বড় রকমের আঘাত ঘটেছে।
বিষয়টি বুঝতে কারোই অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, উক্ত দু’টি আদালত সম্পর্কিত দলীয় বিষয় সরকার প্রধানের একান্ত ইচ্ছা থাকলেও পূরণ করা সম্ভব নয়। সরকারপক্ষ দাবী প্রত্যাক্ষান করা মাত্রই গনভবনের ভুরিভোজনের পর্ব সামনে রেখে, সভাস্থল ত্যাগ করাই ছিল মূল লক্ষ।কিন্তু অংশগ্রহনকারী নেতাগন সভাস্থল ত্যাগের ফন্দি বাস্তবায়ন দূরে থাকুক বিষয়টি’ই জোরালোভাবে উত্থাপন করেননি।
এতে তারেক জিয়াপন্থি নেতাগন মনে করেন, সংলাপে অংশ গ্রহনকারী নেতাগন পুর্বে ব্রিফিং থাকা সত্বেও আন্দোলনের জনগনের হৃদয়স্পর্ষি দুটি হাতিয়ার নষ্ট করেছে (১) খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার মামলা সরকারের সাজানো, দন্ড শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা (২) বাঙ্গালীরা স্বাভাবিক ভাবে অতিথী পরায়ন, সুস্বাদু খাবার প্লেট সামনে দিয়ে, শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের গনভবন থেকে বের করে দিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবে হুজুগে বাঙ্গালী বিষয়টি কোন অবস্থায় মেনে নিতোনা।সুতারাং হেলায় সুবর্ন সুযোগ হারানোর বেদনা মা পক্ষের কেউ কেউ কিছুটা মেনে নিতে পারলেও পুত্রপক্ষের তরুনতুর্কিরা কেউ কোন অবস্থায় মেনেতো নিচ্ছেনই না, সংলাপে অংশ গ্রহনকারী বর্ষিয়ান আইনজ্ঞ নেতাদের সহ্যও করতে পারছেন না।
সংলাপ পরবর্তি তারেক জিয়া অংশের বিএনপি এবং খালেদা জিয়া অংশের বিএনপি নেতাদের মধ্যে তার’ই অন্তদন্ধ চরম আকার ধারন করে চলছে। এই ইস্যুটি নিয়ে দলটির ভিতর বাইরে দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে, যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলে আশ্চায্য হওয়ার কিছুই থাকবেনা। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশংকার বিষয়টির সঙ্গে কিন্তু দলীয় নীতি, আদর্শ বা নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা জড়িত নেই।বিষয়টি’র সাথে ‘অর্থ সংক্রান্ত বিরাট একটি বিষয় অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে।
দেশে- বিদেশে প্রায় সব মহলেরই কিছুনা কিছু জানা আছে, জামায়াতে ইসলামীর বিপুল পরিমাণ দেশী বিদেশী টাকা প্রাপ্তির উৎস বিদ্যমান আছে। উক্ত টাকার তহবিল রক্ষক বৃটেনে তারেক জিয়ার বাসভবনের পাশেই অবস্থান করেন। অলিখিত ভাবে এতদিন তারেক জিয়া আন্দোলন, জঙ্গিলালন, কর্মিলালন, বিদেশী লবিষ্ট নিয়োগ সহ বিভিন্ন দলীয়কাজে এবং তাঁর ব্যাক্তিগত কাজে যথেচ্ছভাবে ব্যাবহার করে এসেছেন।জামায়াতের টাকার উপর নির্ভর করেই মুলতঃ তারেক জিয়া দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে পেরেছে।
এক্ষনে খালেদার মুক্তি আন্দোলন এবং তারেকের মামলা প্রত্যাহার ইস্যু ব্যাকডেটেট হয়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবে টাকার উৎসে চরম্ বিপয্যয় ঘটার আশংকা দেখা দিবে। তাই বলছিলাম–খালেদার মুক্তি এবং তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহার বিষয়টি তারেক জিয়া অংশের বিএনপি নেতাদের নিকট এই মহুর্তে একেবারেই গৌন বিষয়। বিএনপি দলের সদিচ্ছা থাকলে এইরুপ দুই চার দশটি মামলা হতে মুক্তি অন্ততঃ পক্ষে জিয়া পরিবারের জন্যে কোন বিষয়ই নয়, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি।
জামায়াতে ইসলামী’ টাকার বিনিময়ে সর্ববৃহৎ এবং জনসমর্থিত দলের প্রধান দুই নেতার মামলা প্রধান ইস্যু করে জনগনের ব্যাপক সমর্থন আদায় করে আন্দোলনের মাধ্যমে আইনের শাসন ভুলুন্ঠিত করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। এতে কোন সন্দেহ আছে বলে আমি মনে করিনা–খালেদা, তারেক প্রধান বিষয় হলে এতদিনে সরকারের সাথে বিএনপির একটি সম্মানজনক সমঝোতা করা আদৌ অ-সম্ভব ছিল না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবারই তেমন একটি সমঝোতার ইঙ্গিতপুর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন।বিএনপি সে দিকে না হেঁটে বা শেখ হাসিনার ইঙ্গিত অনুসরন না করে, জামায়াতের টাকায় আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে।
সুতারাং বিধির বিধান না যায় খন্ডন, বিএনপি- জামায়াতে’র অনুসারীদের এই সময়ে হতবিহব্বল হওয়ার কোন কারন নেই। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দন্ড শেষে তাঁদের ফরিয়াদ কবুল করবেন। তাঁদের নেতা নেত্রীকে তাঁদের মাঝে ফিরিয়ে দিবেন।
সেই পয্যন্ত ধৈয্য ধারন করে–“বর্তমান সময়ে জন কাংক্ষিত চলমান গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার গনআন্দোলনে সম্পৃত্ত হয়ে, উক্ত আন্দোলনকে লক্ষে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মী,সমর্থকদের দুষ কি?

রুহুল আমিন মজুমদারঃ-কলামিষ্ট






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*