প্রাণের ৭১

আহমদ শফীর বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফির বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এই ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রত করবে।

রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, নারী-শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনে করে সুশিক্ষায় নারী আলোকিত না হলে তাদের বিকাশ ও প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না।

এ সময় নারীশিক্ষা নিয়ে শাহ আহমদ শফির দেওয়া বক্তব্য ‘অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষিত না হলে সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক ও মানবিক সাম্যসহ ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী বুঝতে পারবে না। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষরপরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হলো মায়ের সাহচর্য। সুতরাং মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না।

বিবৃতিতে শিক্ষা নিয়ে নিজ দল বিএনপির নীতি তুলে ধরে তিনি বলেন, সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করতে নারীশিক্ষা অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেকই নারী। প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কারের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে জাতিগঠন ও জাতীয় অর্থনীতিতে যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারীশিক্ষা। এটি বিএনপির ঘোষিত নীতি।

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তারা প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না। নিগ্রহ ও অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অক্ষরহীন নারীদের অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশ ও সমাজ পিছিয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসার ১১৮তম বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি বলেন, ‘আপনাদের মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না। ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। আর বেশি যদি পড়ান… পত্র-পত্রিকায় দেখতেছেন আপনারা… মেয়েকে ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ, বিএ পর্যন্ত পড়ালে ওই মেয়ে কিছুদিন পর আপনার মেয়ে থাকবে না। তাই আপনারা আমার সাথে ওয়াদা করেন। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে। এ ওয়াজটা মনে রাখবেন।’ এ সময় উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ হাত তুলে ওয়াদা করেন।

তার এই বক্তব্যের পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আহমদ শফি ব্যক্তিগত অভিমত দিয়েছেন। তার অভিমত যে রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রতিফলন ঘটবে এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই। তিনি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজের বিশ্লেষণ সেটা দিয়েছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও নারী সংগঠন শাহ আহমদ শফির বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

পরে শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আহমদ শফি দাবি করেন, তার বক্তব্যের একটি খণ্ডিতাংশ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

হেফাজত আমিরের পক্ষে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুইনুল ইসলাম এর নির্বাহী সম্পাদক সরওয়ার কামাল ব্যাখ্যা সম্বলিত বিবৃতিটি প্রেরণ করেন।

এতে হেফাজত আমির বলেন, আমি মূলত বলতে চেয়েছি ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের পড়াশুনা করানো উচিৎ হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সকল কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সকলেই অবগত যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়িশা (রাঃ) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেত। তবে এর পাশাপাশি ইসলামের একটি মৌলিক বিধান হচ্ছে পর্দা। নারীদের পর্দার বিষয় ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আমি আমার বক্তব্যে বলতে চেয়েছি, শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে যেন পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা না হয়। কারণ আমাদের দেশের বেশীরভাগ সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে সহশিক্ষা দেয়া হয়, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একই সাথে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এতে করে পর্দার লঙ্ঘন হয়। আমি মূলত এই সহশিক্ষা গ্রহণেই মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছি।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমাকে নারী বিদ্বেষী ও নারী শিক্ষা বিদ্বেষী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*