মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান এনায়েত হোসেন নয়ন
নিজস্ব প্রতিনিধিনি: নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই মিরসরাইয়ে আগামী উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বেশ জমে উঠেছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় আলোচনার ঝড় বইছে এই নির্বাচন নিয়ে। কে হচ্ছে প্রার্থী, দলীয় মনোনয়ন কে পাবে? বিএনপি আদৌ উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কি-না, আওয়ামীলীগের টিকেট পাচ্ছে কে? এসব নিয়ে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষন। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কি-না, এই বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও আওয়ামীলীগের প্রার্থীতা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সম্ভ্যাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রার্থীদের পক্ষে জোরে-শোরে প্রচারনা লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামীলীগ থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অন্যতম করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ তুর্কি এনায়েত হোসেন নয়ন। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বই প্রতিকে ৩৪ হাজার ৪শ ৬৫ ভোট পেয়েছিলেন নয়ন। সেবার বিএনপির প্রার্থী মাঈন উদ্দিন মাহমুদ ৪৫ হাজার ৮০২ ভোট পেয়ে তখন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুর্ভাগ্য এনায়েত হোসেন নয়নের। কারণ ল্যাপটপ প্রতিকের কারণে তাঁর প্রায় ২২ হাজার ভোট নষ্ট হয়ে যায়। তা নাহলে তিনিই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। সেই নির্বাচনে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চষে বেড়ানোর কারণে তিনি ব্যাপক পরিচিতির পাশাপাশি ভালো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এছাড়া ওই নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে পুরো উপজেলাজুড়ে নির্বাচন নিয়ে তাঁর ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা আর জনপ্রিয়তাকে পুুঁজি করে আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান।
জানা গেছে, এনায়েত হোসেন নয়ন ২০১৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এপর্যন্ত ওই ইউনিয়নে রেকর্ড পরিমান উন্নয়ন কাজ করেছেন। অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে।
মিরসরাই রাজনীতি অঙ্গনে পরিচিত মুখ এনায়েত হোসেন নয়ন ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি, শিক্ষা, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথেও জড়িত রয়েছেন।
আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে সমাজ সেবার সাথে জড়িত। আমার বাবা করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। জনগন আমাকে প্রায় ৫৭ হাজার ভোট দিয়েছে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য। অনেকে আমার প্রতিক বই মনে করে ল্যাপটপে ২২ হাজার ভোট দেয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
২০১৬ সালে আমি করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত সহযোগীতায় অত্র ইউনিয়নে গত আড়াই বছরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের অভিবাবক সাবেক সফল মন্ত্রী, ৭ বারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের একান্ত সহযোগীতায় করেরহাট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকান্ড করে আসছি। সমাজ সেবার পরিধি আরো বাড়াতে এবং উপজেলাজুড়ে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের সারথি হতে আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও মন্ত্রী পরিষদ গঠনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের আগ্রাধিকার দিয়েছেন। আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া পূর্বে এই নির্বাচন সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা থাকায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আর্দশে দীক্ষিত হয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন ছাত্রলীগের যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি হয়। তখন থেকে দীর্ঘ সময় গরীব দুখী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। স্কুল জীবন থেকে প্রায় ২৮-৩০ বছর ধরে আমার প্রিয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের রাজনৈতিক আদর্শ আমাকে অনুপ্রানিত করে। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের একজন আস্থাভাজন কর্মী হিসেবে তার সানিধ্যে গিয়ে প্রিয় নেতার সকল প্রকার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। যতদিন বেঁচে থাকবো প্রিয় নেতার আদর্শে রাজনীতি ও সমাজসেবা করে যাবো। এজন্য সকলের সহযোগীতা ও দোয়া চাই।
এনায়েত হোসেন নয়নের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন। ১৯৮২ সালে তিনি করেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ সালে রাজধানীর মিরপুর আইন কলেজের ভিপি, ১৯৯৭ সাল থেকে টানা ১৫ বছর করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়াও তিনি অসংখ্যা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের দায়িত্ব পালনও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। বর্তমানে প্রজন্ম৭১ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, পশ্চিম জোয়ার পানি উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি, অভিযান ক্লাবের তিন তিন বারের সভাপতি, পশ্চিম জোয়ার ক্রীড়া সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা, অভিযান ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও চট্টগ্রামস্থ মিরসরাই সমিতি আজীবন সদস্য, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সহ অসংখ্য সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।
এনায়েত হোসেন নয়ন করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের আলী আহম্মদ আমিন ভূঁইয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করে। তিনি করেরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম রফিক আহম্মদ প্রকাশ চট্টু চেয়ারম্যানের ছোট ছেলে ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সিএনসি জাফরের নাতি।